নরেন্দ্রনাথ কুলে
দেশে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে বলে এক সংস্থার রিপোর্ট বলছে । এই রিপোর্ট বলছে বর্তমানে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে বাহাত্তর লাখ । দু'বছর আগে এমন কর্মীর সংখ্যা ছিল সাতান্ন লাখ । আগামী দু'বছরে তা বেড়ে হবে একানব্বই লাখ । অস্থায়ী কর্মীর একাত্তর শতাংশ তিরিশ বছরের নীচে এবং ছাব্বিশ শতাংশ মহিলা । এই সংস্থা মনে করে যে আগামী পাঁচ বছরে অস্থায়ী কর্মীর চাহিদা আরো বাড়বে । এটাই তো স্বাভাবিক। এখন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অধিকাংশ কাজই তো ঠিকাদারি প্রথায় সম্পন্ন হচ্ছে । স্থায়ী কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থাটা যখন শেষ করে দেওয়ার পথ খুলে দেওয়া হয়েছে, সেখানে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বাড়বে তো বটেই । কর্মসংস্থানের ধরণটাই তো পরিবর্তিত হয়ে চলেছে । ঠিকাদারি প্রথায় কলকারখানা থেকে অফিস-আদালত সর্বত্র কাজ চলছে । এমনকি শিক্ষক, পুলিশ, সৈনিক, নিরাপত্তারক্ষী আজ ঠিকাকর্মী । এই অবস্থায় অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বাড়বে না তো কমবে ?
আগামীদিনে অস্থায়ী কর্মীর চাহিদা বাড়বে বলে যে মত প্রকাশিত হচ্ছে তা অর্থনীতির সুস্বাস্থ্যের পরিচয় দেবে ঠিকই, কিন্তু শ্রমিকের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পাবে তা কি বলা যায় ? কিংবা কর্মসংস্থানের চাহিদা বাড়ার সাথে কর্মীর বেঁচে থাকার জীবনযাপনটা শুধু টিকে থাকতে পারে । কিন্তু একেবারে নিশ্চিত জীবনযাপন তাদের তা বলা যায় কি ? একটি ঠিকাদারি সংস্থার একেবারে সাধারণ কর্মী কলকাতা শহরে কেটেকুটে আট থেকে ন'হাজার পাচ্ছে । চাহিদাসম্পন্ন কর্মসংস্থানে অস্থায়ী কর্মীর এমন ধারাবাহিক আয় থেকে কমপক্ষে পাঁচজন (বাবা,মা,স্বামী, স্ত্রী, একটি সন্তান) পরিবার যেভাবে চলে আমাদের উন্নয়ন এখনও সেই স্তরে পৌঁছতে পেরেছে কি ? তবু উন্নয়ন শব্দ নিয়ে গলা ফাটিয়ে চলে রাজনৈতিক শাসকদল ।
অস্থায়ী কর্মীর শ্রমে মালিক লাভের পাহাড় তৈরি করে, অস্থায়ী কর্মীর শ্রমে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হয় । অথচ এই শ্রমিকের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা নড়বড়ে । তাদের দুঃখকষ্টের দাবি তারা করতে পারবে না এমনই নড়বড়ে করে দিচ্ছে সরকারি ব্যবস্থা। সেই সুযোগটা কেড়ে নিতেই সরকারের নতুন শ্রমিক আইন লাগু করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে । এই পথে দেশ এগিয়ে চলেছে ঠিকই, কিন্তু শ্রমিকের জীবন দোদুল্যমান। শ্রমিক, কর্মী যত অস্থায়ী হবে দেশের উন্নয়ন তত স্থায়ী হতে পারে কি ? এ প্রশ্নের উত্তরে, রাজনৈতিক শাসকের শ্লোগানে তাই উন্নয়ন শব্দের কম্পাঙ্কের তীব্রতায় কোন সংশয় থাকে না ।