ছন্দা আচার্য
প্রতি বছর ১৯ আগস্ট পালিত হয় World Photography Day—যেদিন সারা বিশ্বের আলোকচিত্রী এবং ফটোগ্রাফি-প্রেমীরা একত্রে উদযাপন করেন ক্যামেরার লেন্সে বন্দি জীবনের অসীম বৈচিত্র্য। ফটোগ্রাফি কেবল একটি শখ বা শিল্প নয়, বরং এটি এক ধরনের ভাষা—যা শব্দের সীমা ছাড়িয়ে আবেগ, সৌন্দর্য, বেদনা ও মানবিক গল্পকে পৌঁছে দেয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
ফটোগ্রাফির ইতিহাস শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের গোড়ার দিকে, যখন প্রথম ক্যামেরার উদ্ভাবন মানুষের কল্পনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতি ফটোগ্রাফিকে করেছে আরও সহজলভ্য এবং প্রাণবন্ত। আজ আর ক্যামেরা কেবল কিছু মানুষের হাতে সীমাবদ্ধ নয়; স্মার্টফোনের কল্যাণে প্রায় সবার হাতেই আছে একটি শক্তিশালী যন্ত্র, যা দিয়ে ধরা যায় মুহূর্তের অমূল্য সৌন্দর্য। কিন্তু যন্ত্রের বাইরেও ফটোগ্রাফির মূল শক্তি হলো দৃষ্টি—কোনো চোখ কতটা গভীরভাবে পৃথিবীকে দেখতে পারে, সেটাই ছবিকে করে তোলে অনন্য।
ফটোগ্রাফি শুধু দৃশ্যপট ধরে রাখে না, বরং ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠে। একটি ফটোগ্রাফ হয়তো যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখায়, আবার একটি হাস্যোজ্জ্বল মুখ পৃথিবীকে শেখায় আশার কথা। প্রকৃতির বিস্ময়, মানুষের গল্প, সংস্কৃতির বৈচিত্র্য—সবই মিশে যায় ছবির ভেতর, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করে নিয়ে যায় সেই মুহূর্তকে।
আজকের দিনে ফটোগ্রাফি কেবল স্মৃতির বাহন নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ারও। একটি শক্তিশালী ছবি অনেক সময় হাজার শব্দের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে মানবিক সংকট—সব ক্ষেত্রেই ফটোগ্রাফি মানুষের সচেতনতা জাগিয়ে তুলছে। এটি একদিকে যেমন শিল্প, অন্যদিকে তেমন দায়িত্বের প্রতীক।
World Photography Day তাই আমাদের অনুপ্রাণিত করে প্রতিটি মুহূর্তকে নতুন চোখে দেখতে। প্রতিটি ছবি যেন হয়ে ওঠে ভালোবাসার প্রকাশ, সৌন্দর্যের সাক্ষী, কিংবা অন্যায়ের প্রতিবাদ। ছবি আমাদের শিখিয়ে দেয়, সময় হয়তো বয়ে যায়, কিন্তু অনুভূতি বন্দি থাকে ফ্রেমের ভেতরে।
আজকের দিনে আসুন আমরা স্মরণ করি, ফটোগ্রাফি কেবল একটি যন্ত্রের ক্লিক নয়, বরং মানুষের হৃদয় দিয়ে পৃথিবীকে দেখা। এই দিনটি সেই সৃষ্টিশীল দৃষ্টি, সেই কৌতূহলী মন আর সেই আবেগী হৃদয়কে সম্মান জানানোর দিন, যারা প্রতিটি ক্লিকের মাধ্যমে পৃথিবীকে করে তুলছে আরও বর্ণময় ও স্মরণীয়।