পিয়া রায়
প্রতি বছর ১৯ আগস্ট পালিত হয় World Humanitarian Day—একটি দিন যা মানবতার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি কিংবা ক্ষুধা–কষ্টের সময় অসংখ্য মানুষ নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে দাঁড়িয়ে যান অন্যের পাশে। মানবিক সহায়তা শুধু খাদ্য, পানি বা ওষুধ পৌঁছে দেওয়াই নয়, বরং আশা জাগানো, নতুন করে বেঁচে ওঠার প্রেরণা দেওয়া। এই দিন সেই সব নির্ভীক আত্মাকে স্মরণ করে, যারা মানবতার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, এমনকি অনেকেই এ পথে নিজের জীবন হারিয়েছেন।
মানবিকতার ইতিহাসে দেখা যায়, প্রতিটি বড় বিপর্যয়েই সহমর্মিতা হয়ে উঠেছে সমাজের শক্তি। ভূমিকম্পে ভেঙে যাওয়া শহর, বন্যায় প্লাবিত গ্রাম কিংবা শরণার্থীদের ক্লান্ত চোখে মানবিক হাত বাড়িয়ে দেওয়া যেন অন্ধকারের মধ্যে এক আলো। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ মানুষ এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তারা আমাদের শেখান—মানবতা কোনও সীমানা মানে না, কোনও জাতি-ধর্মে আবদ্ধ নয়।
World Humanitarian Day আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীতে এখনও অসংখ্য মানুষ আছেন যারা দুঃখ-কষ্টের ভার হালকা করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারা আমাদের শিখিয়ে দেন, দয়া ও সহানুভূতি মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। আজকের দিনে প্রযুক্তি যত উন্নতই হোক না কেন, মানবিকতা ছাড়া পৃথিবী কখনো টিকে থাকতে পারে না।
এই দিন কেবল মানবিক সহায়তা কর্মীদের সম্মান জানানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাধারণ মানুষকেও অনুপ্রাণিত করে ছোট ছোট উদ্যোগে যুক্ত হতে। হয়তো একটি ক্ষুধার্ত শিশুকে আহার দেওয়া, কোনও অসুস্থ প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়ানো কিংবা দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় সাহায্য পাঠানো—প্রতিটি কাজই মানবিকতার শক্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।
আজকের পৃথিবী নানা সংকটে জর্জরিত—যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য ও বৈষম্য। এর প্রতিকার শুধু সরকার বা বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। মানবিক প্রচেষ্টা তখনই সার্থক হয়, যখন প্রতিটি মানুষ নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব নেয়। মানবতার এই বার্তাই ছড়িয়ে দেয় World Humanitarian Day—“আমরা একসাথে হলে, পৃথিবীর কষ্ট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।”
মানবতা হলো এক অদৃশ্য সেতু, যা মানুষকে মানুষে যুক্ত করে। এই সেতু যত দৃঢ় হবে, পৃথিবী ততটাই বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই আজকের দিনে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি—নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী মানবতার কাজে এগিয়ে আসব। কারণ নিঃস্বার্থ সহায়তার মধ্যেই নিহিত আছে প্রকৃত মানবতার জয়।