ছন্দা আচার্য
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধ আর ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বহুবারই আমাদের মনকে নাড়া দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পরমাণু বিস্ফোরণের ঘটনা পৃথিবীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল—পারমাণবিক অস্ত্র কোনো শক্তির প্রতীক নয়, বরং মানবতার জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হুমকি। এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই জাতিসংঘ ২৯শে আগস্টকে ঘোষণা করেছে International Day Against Nuclear Tests বা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরীক্ষা বিরোধী দিবস হিসেবে। এর মূল উদ্দেশ্য, বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক পরীক্ষার ভয়াবহ প্রভাব সামনে আনা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানানো।
পারমাণবিক পরীক্ষার ক্ষতি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এর বিস্ফোরণ প্রকৃতিকে করে তোলে বিষাক্ত, মাটি আর জল দূষিত হয়ে পড়ে, আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ ভোগে নানারকম শারীরিক জটিলতায়। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে জন্মায় জন্মগত ত্রুটি, ক্যান্সার আর মরণব্যাধি। একবার কোনো অঞ্চলে এই ধরনের পরীক্ষা চালানো হলে বহু দশক ধরেও তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। প্রকৃতি আর মানবজীবনের জন্য এটি যেন এক অদৃশ্য মৃত্যুফাঁদ।
এই দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—পারমাণবিক অস্ত্র বা তার পরীক্ষা কোনো দেশের আসল শক্তির পরিচয় নয়। বরং প্রকৃত শক্তি নিহিত রয়েছে শান্তি, সহযোগিতা আর মানবকল্যাণে। বিশ্বের বহু দেশ ইতিমধ্যেই Comprehensive Nuclear-Test-Ban Treaty (CTBT)-তে সই করেছে, যার লক্ষ্যই হলো সবধরনের পারমাণবিক পরীক্ষার একেবারে অবসান ঘটানো। যদিও এখনও কয়েকটি দেশ এ চুক্তিতে সই করেনি বা অনুমোদন দেয়নি, তবুও বিশ্বমানুষের মত ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে পরীক্ষামুক্ত পৃথিবীর পক্ষে।
এই সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা যদি শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিই, নতুন প্রজন্মকে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে শিক্ষিত করি, তবে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোও আরও কার্যকর হবে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের মঙ্গল, ধ্বংস নয়।
International Day Against Nuclear Tests আসলে এক প্রতিশ্রুতির দিন। এটি আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়—মানবসভ্যতা পারমাণবিক ধ্বংসের ছায়ায় নয়, বরং শান্তি আর নিরাপত্তার আলোতেই বিকশিত হতে পারে। আসুন, আমরা সকলে মিলে এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে যুদ্ধ নয়, পারস্পরিক সহযোগিতা আর আস্থাই হবে আগামী দিনের উত্তরাধিকার।


