নরেন্দ্রনাথ কুলে
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেশের দরিদ্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন । তাঁর রাজনৈতিক জীবনে জয়ী জনপ্রতিনিধি হিসেবে মাসিক বেতন থেকে ভাতা কোনকিছুই এখনও পর্যন্ত তিনি গ্রহণ করেননি । হিসেব অনুযায়ী তাঁর প্রাপ্য ১৪ কোটি টাকা রাজকোষে জমা আছে বলে খবরে প্রকাশিত। কিন্তু তিনি এই টাকা গ্রহণ করেননি এবং করবেনও না । কারণ তাঁর সংসার চলে তাঁর বই, ছবি, গানের রয়্যালটি থেকে । এই খবর তাঁর দারিদ্রতার পরিচয়ের থেকে তাঁর বিনয় ও উদার মনের জীবন দেশের জন্য বেশি নিবেদিত হিসেবে প্রমাণ করে । বিশেষ করে ভোটের আগে এই খবর ভোটে তাঁকে ও তাঁর দলকে আরো এগিয়ে দিতে সাহায্য করবে । দুর্নীতির পাঁকে নিমজ্জিত তাঁর দল যখন আঁকুপাঁকু করছে, তখন তাঁর এই দারিদ্র ইমেজ ভোটের ক্ষেত্রে কার্যকর করে তুলবে । 'দরিদ্র জনসাধারণের দরিদ্র মুখ্যমন্ত্রী'- এই শব্দবন্ধ তৃণমূলকে সমৃদ্ধ করবে । এমনিতেই ভোট এলেই তিনি বলেন, তৃণমূলকে ভোট মানেই তাঁকে ভোট । অর্থাত ভোট তাঁকে দেখে দিতে অনুরোধ করেন ভোটের সভায় সভায় । তাঁর দরিদ্র পরিচয় হবে তার সোনায় সোহাগা ।
তিনি দরিদ্র বলেই দরিদ্রদের কথা ভাবেন । শুধু ভাবেন না, দরিদ্রদের জন্য কাজ করেন । তিনি যা বলেন তা করে দেখান । দরিদ্র হলেও দরিদ্রদের জন্য হৃদয় উজাড় করে দিতে পিছপা নন ।
তিনি দরিদ্র অবস্থান থেকে উপলব্ধি করেছেন দরিদ্রদের উন্নতিবিধানে কর্মসংস্থানের থেকে দানের প্রয়োজন । তার জন্য তিনি তাঁর মত করে উজাড় করে দিতে পারেন । তবে সবার ক্ষেত্রেই যে তিনি উদার তা নয় । বেকার যুবকদের ক্ষেত্রে একেবারেই নয় । বেকারত্ব নিয়ে তিনি একবারও ভাবেন না তা নয় । তিনি দরিদ্র হলে কি হবে, শিল্পের জন্য ভাবেন । অবশ্য তাঁর মত করে । বাংলার অনেক শিল্প সম্পর্কে বেকারদের গাইড করেছেন যা বাংলার নিজস্বতাকে যেমন তুলে ধরবে, তেমন বেকার যুবকযুবতীরা নতুন শিল্পে শিল্পপতি হতে পারবে । । হয়তো তিনি এভাবে একদিন কর্মসংস্থানের সমাধান করতে পারবেন । দরিদ্র অবস্থান থেকে শিক্ষার গুরুত্ব হয়তো তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন নি । তাই যোগ্য শিক্ষকপ্রার্থী তাঁর কাছে যোগ্য নয় । অযোগ্যদের হয়ে তিনি কথা বলেন । তাদের পাশে আছেন বলে ভরসা দিতে পারেন । যোগ্যতার মাপকাঠি অর্থের বিনিময়ে ঠিক হলেও কি যায় আসে ! দারিদ্রতার মাপকাঠি দিয়ে তিনি হয়তো অযোগ্যদের হয়ে কথা বলেছেন ।
অর্থের প্রতি তাঁর লোভ নেই। যেটুকু লোভ সে তাঁর দলের জন্য । দরিদ্র অবস্থান থেকে তিনি তাঁর দলকে অবশ্য দেশের ধনী দলেদের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন । তাঁর নেতা মন্ত্রীরাও ধনী হতে পেরেছেন । অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নেতারা কে কোথায় কিভাবে অর্থ কামাচ্ছে তিনি খেয়াল করেন না । অবশ্য যখন খেয়াল করেন তখন তিনি দলের সততা নিজের সততার আলোছায়ায় পরিবেশ পাল্টে দিতে তিনি পটু । সেই পটুতায় তাঁর প্রতিভা সত্যিই বিরল । আর ভোট এলে সেই প্রতিভার জাদুকর হয়ে ওঠেন । বিশেষ করে ভোটের সময় সেই জাদুদন্ডে চারিদিকে ভরে ওঠে তাঁর দারিদ্রতার জয়গান ।


