পিয়া রায়
মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। তার চিন্তা, মত, বিশ্বাস ও জীবনযাপনের অধিকার কারও দয়া বা অনুগ্রহে নয়, প্রকৃতির নিয়মেই প্রাপ্ত। এই মৌলিক সত্যের প্রতীক হিসেবেই প্রতিবছর পালিত হয় Individual Rights Day বা ব্যক্তিস্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র প্রকৃত অর্থে তখনই এগিয়ে যেতে পারে, যখন প্রতিটি মানুষকে তার প্রাপ্য অধিকার সসম্মানে প্রদান করা হয়।
ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণা আজ নতুন কিছু নয়। ভারতীয় দর্শন থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা সভ্যতায় মানুষকে মর্যাদা ও স্বাধীনতার চোখে দেখার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আধুনিক গণতন্ত্রের মূলে যে মূল্যবোধগুলো রয়েছে, তার অন্যতম হলো ব্যক্তিস্বাধীনতা। এটি শুধু বাকস্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের অধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং নিজের জীবনপথ বেছে নেওয়া, শিক্ষা গ্রহণ, ধর্মাচরণ, পেশা নির্বাচন থেকে শুরু করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তাই এর আসল তাৎপর্য।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামও মূলত এই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল ভাঙার আন্দোলন ছিল আসলে মানুষের নিজস্ব অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। পরবর্তীকালে ভারতের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে সমানাধিকার, স্বাধীনতা, ন্যায় ও ভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকার দিয়েছে। তবুও বাস্তব জীবনে আজও আমরা দেখতে পাই—কখনও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাপে পড়ে, কখনও আবার বৈষম্য ও কুসংস্কারের শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
এই দিনটি তাই কেবল উদ্যাপনের জন্য নয়, আত্মসমালোচনারও দিন। আমরা কি সত্যিই প্রত্যেক মানুষকে তার অধিকার দিতে পারছি? নারী, শিশু, প্রান্তিক মানুষ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়—তাদের জীবন কি সমান মর্যাদা পাচ্ছে? Individual Rights Day আমাদের সেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
ব্যক্তিস্বাধীনতার মূল শিক্ষা হলো, কারও অধিকার অন্য কারও স্বাধীনতাকে খর্ব না করে। অর্থাৎ প্রকৃত স্বাধীনতা মানে দায়িত্বশীলতা। সমাজে যদি প্রত্যেকেই অন্যের অধিকারকে সম্মান করতে শেখে, তবে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা অনেকাংশেই দূর হবে।
এই দিনে আমাদের শপথ হোক—মানবাধিকারকে কেবল আইনের ধারায় সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিদিনের আচরণে, চিন্তায় ও সংস্কৃতিতে জায়গা দিতে হবে। আমরা যদি শিশুদের ছোট থেকেই শেখাই, প্রত্যেক মানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হবে এক ন্যায়ভিত্তিক, স্বাধীনচেতা সমাজের নাগরিক হিসেবে।
Individual Rights Day আসলে শুধু ব্যক্তির স্বাধীনতার উৎসব নয়, এটি মানবতার জয়গান। প্রতিটি মানুষ যখন স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারবে, তখনই সমাজে আসবে প্রকৃত শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নতির আলো।


