যোগমায়া আচার্য
ভারতের উৎসব-পঞ্জিকায় গণেশ চতুর্থী এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং ভক্তি, আনন্দ ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে উদযাপিত হয় এই উৎসব। গজানন, বুদ্ধিদাতা, বিঘ্নহর্তা শ্রীগণেশের আবির্ভাব দিবস হিসেবেই গণেশ চতুর্থীকে পালন করা হয়।
এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল মূলত মহারাষ্ট্রে, তবে আজ তা সীমা ভেঙে সমগ্র দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ভারতীয় প্রবাসী সমাজও বিদেশের মাটিতে সমান উজ্জ্বলতায় পালন করেন গণেশ চতুর্থী। ঘরে ঘরে মাটির গণেশ প্রতিমা এনে পূজা করা হয়, আবার বড় আকারে প্যান্ডেল সাজিয়ে সমাজের মানুষ একত্রে দেবতাকে আহ্বান করেন।
গণেশ চতুর্থীর প্রধান আকর্ষণ প্রতিমা বিসর্জন। পূজার পর দিন কয়েক ধরে চলতে থাকে ভক্তি, গান, নৃত্য ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন। শেষে আনন্দধ্বনি, ঢাক-ঢোল ও শঙ্খধ্বনির মাঝে ভক্তরা গণেশকে বিদায় জানান, এই আশ্বাসে যে তিনি আবার আগামী বছর ফিরে আসবেন। প্রতিমা বিসর্জনও এক ধরনের আধ্যাত্মিক বার্তা বহন করে—জীবনের সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু ভক্তির ধারা অমলিন।
এই উৎসবের সামাজিক গুরুত্বও অপরিসীম। গণেশ চতুর্থীই ছিল বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের এক বড় মাধ্যম। ব্রিটিশ শাসনের সময়ে গণেশ উৎসবকে সমাজকে একত্রিত করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ভক্তির পাশাপাশি এখানে লুকিয়ে ছিল স্বাধীনতার সংগ্রামের উদ্দীপনা।
আজকের দিনে এই উৎসব পরিবেশ-সচেতনতার বার্তাও বহন করছে। মাটির প্রতিমা, প্রাকৃতিক রং ব্যবহার এবং প্লাস্টিক বর্জনের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশ রক্ষায় নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছেন। এতে উৎসবের পবিত্রতা যেমন অক্ষুণ্ণ থাকে, তেমনি প্রকৃতিও রক্ষা পায়।
গণেশ চতুর্থী তাই কেবল দেবতার পূজা নয়, এটি ভক্তির অনাবিল আনন্দ, সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। ঢাকের তালে তালে, ভক্তিমূলক সঙ্গীতে, আর বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে প্রতিটি অঙ্গন। গজাননের আশীর্বাদে ভক্তরা আশা করেন নতুন সূচনা, অকল্যাণ দূরীকরণ ও জীবনযাত্রার পথে সফলতা।
এইভাবে গণেশ চতুর্থী ভারতীয় সমাজে ভক্তি ও ঐক্যের সেতুবন্ধন হিসেবে আজও সমান প্রাসঙ্গিক ও প্রাণবন্ত।


