ভারতের অপরাধ জগতের সবচেয়ে আলোচিত ও রহস্যময় নাম নটবরলাল ওরফে মিথিলেশ কুমার শ্রীবাস্তব। ১৯১২ সালে বিহারের সিওয়ান জেলার জিরাদাই গ্রামের বাংরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বাবা রঘুনাথ প্রসাদ ছিলেন রেলওয়ে কর্মচারী, কিন্তু ছেলে অল্প বয়সেই অপরাধের পথে পা বাড়ান— গ্রামে কারো স্বাক্ষর জাল করে ১,০০০ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন, যা সেই সময়ে উল্লেখযোগ্য অঙ্ক হিসেবে গণ্য হতো।
প্রতারণার কলা আয়ত্ত করার সাথে সাথে নটবরলাল কলকাতায় পাড়ি জমান এবং সেখানে আইন ও ব্যবসার কলা-কৌশলও আত্মস্থ করেছিলেন। তিনি পঞ্চাশটিরও বেশি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন এবং বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্বাক্ষরও অনায়াসে নকল করতেন। এর মধ্যেই রয়েছে ধীরুভাই আম্বানি, টাটা ও বিড়লা গ্রুপের কর্ণধাররা।
নটবরলালের সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে যে তিনি একবার তাজমহল ও লালকেল্লা পর্যন্ত জাল দলিলে অপর কারো কাছে “বিশেষ মূল্যে” হস্তান্তর করেছিলেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবন ও সংসদ ভবনও তাঁর কারসাজিতে গ্রাহকের হাতে যায়— যা বিশ্বাস করাই কঠিন!
তার বিরুদ্ধে ভারতের আটটি রাজ্যে একশোটিরও বেশি মামলা রয়েছে, এবং বিভিন্ন অপরাধে তাকে মোট ১১৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু কারাদণ্ডের মাত্র ২০ বছর কাটান নটবরলাল, এর মধ্যেই তিনি ৯বার কারাগার থেকে পালান। ১৯৯৬ সালে, ৮৪ বছর বয়সে, কানপুর জেল থেকে দিল্লির এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি অন্তর্ধান হন। আজও তাঁর মৃত্যু-সংক্রান্ত তথ্য অস্পষ্ট ও রহস্যময় রয়ে গেছে।
অনেক গ্রামবাসীর কাছে নটবরলাল ছিলেন আধুনিক রবিন হুড— অপরাধ করেও যিনি গরিব ও দুর্বলদের সাহায্য করেছিলেন। অপরদিকে অপরাধ জগতের ইতিহাসে তিনি একটা অনন্য ও দুর্বলতা প্রকাশকারী অধ্যায় হিসেবে স্মরিত হবেন অনেক দিন পর্যন্ত।
