আরএসএস এবং বিজেপি নামক শব্দের অস্তিত্ব পৃথক মনে হলেও এ দুটির মধ্যে পরস্পরের সাথে আত্মিকভাবে জড়িত বলেই জানে সবাই। বিজেপি'র রাজনৈতিক সত্তায় আরএসএস-এর ছায়ার মিশ্রণ থাকলেও কোন কোন বিষয়ে তাদের মধ্যে সংঘাত দেখা যায় । যদিও আরএসএস প্রধান সে কথা মেনে নিয়েই বলেছেন সংঘাত হতে পারে, কিন্তু বিরোধিতা নয় । এই অবস্থান থেকে কোন কোন ক্ষেত্রে বিজেপির কর্মকান্ড যখন অতি কট্টরবাদী হয়ে ওঠে তখন তার প্রলেপ দিতে আরএসএস অবতীর্ণ হয় ।
এই মূহুর্তে বাংলা ভাষা ও বাঙালি হেনস্থায় বিজেপির অবস্থান যত স্পষ্ট হচ্ছে, ঠিক তখনই আরএসএস প্রধান বাঙালি মনীষীদের কথা স্মরণ করছেন, তাঁদের বাণী আজকের সমাজের কাজে কতটা প্রাসঙ্গিক তার বর্ণনা করছেন। সম্প্রতি তিনি রবীন্দ্রনাথের 'স্বদেশী সমাজ' প্রবন্ধটি পড়ার জন্য সকলকে বলেছেন । রামকৃষ্ণের 'যত মত তত পথ' বাণী স্মরণ করে অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতার কথা উল্লেখ করেছেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের কথা বলেছেন । যদিও ঐক্যের কথায় ডিএনএ প্রসঙ্গ টেনেছেন যা নাকি এ দেশে চল্লিশ বছর ধরে একই। এমনকি রামকৃষ্ণ তাঁর সাধনায় ইসলাম ধর্মের উপাসনা করেছেন বলে সে দৃষ্টান্তও মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন ।
ভিন্ রাজ্যে বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি বিজেপি প্রশাসনের যে বিরূপ কর্মকান্ড প্রকাশ পেয়েছে, তাতে বাংলার বুকে বাংলার মানুষের কাছে বিজেপি সম্পর্কিত ধারণা ভীতিজনক করে তুলেছে । ঠিক এই জায়গায় মলম দিতে আরএসএস প্রধান মাঠে নেমেছেন বাঙালি মনীষীদের স্মরণ করে । বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ এবং রামকৃষ্ণ যাঁরা আপামর বাঙালির হৃদয়কে স্পর্শ করে আছেন, তাঁদের কথা উচ্চারণ করে তাঁদের বাণী উল্লেখ করে তিনি বাংলায় বিজেপির রাজনৈতিক পথচলার দিগনির্দেশ করার হয়ত আভাস দিয়েছেন । তাবলে তিনি কি সত্যিই রবীন্দ্রনাথ এবং রামকৃষ্ণ কে স্মরণ করলেন তাঁদের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে সমৃদ্ধ করার জন্য । তা নয় । বাঙালির আবেগকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর উপদেশ দিলেন বিজেপিকে । শুধু তাই নয় । স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রধানের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, 'তিনি প্রথমে অনুশীলন সমিতির সাথে যুক্ত হয়েছিলেন, পরে কংগ্রেসে যোগদান করেছিলেন ।' কংগ্রেসে যোগদান করে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই তবে এই আন্দোলনে যোগ দেওয়া নিয়ে তিনি ঠিক কি বলেছিলেন তা জানা প্রয়োজন । তিনি বলেছিলেন, 'সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যেন সত্যাগ্রহে কোনমতেই অংশগ্রহণ না করে । তাঁরা ব্যক্তিগত ইচ্ছায় যেতে পারে, কিন্তু সঙ্ঘের নাম যেন সত্যাগ্রহের সাথে না জড়ায় ।' তাহলে হেগড়েওয়ারের সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদানের জন্য এখনকার আরএসএস প্রধানের কথায় ইতিহাসে তাঁদের উদ্দেশ্য যে অন্য ছিল তা কি পাল্টে দিতে পারবেন । আজও তাঁদের আদর্শ নাথুরাম গডসে এবং সাভারকার । যাঁরা স্বাধীনতার আন্দোলনকে কলঙ্কিত করেছেন ।
আরএসএস-এর শতবর্ষ যাত্রায় রবীন্দ্রনাথ ও রামকৃষ্ণের মত বাঙালি মনীষীর কথা উল্লেখ করে তিনি তাঁর সংস্থার রুচির ইতিহাস পাল্টে দিতে পারবেন ! তাঁদের শতবর্ষ পথ তাঁদের আদর্শে গড়ে উঠেছে কি ? এমনকি তাঁদের সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রধানকে স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বলে দাবি করে তাঁদের স্বাধীনতা আন্দোলনের কলঙ্ককে ঢাকতে পারবেন কি ?

