Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

দুর্গতিনাশিনী জগন্মাতা: শ্রীশ্রীদুর্গাপূজার মাহাত্ম্য ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য


পন্ডিত শ্রী দেবেশচন্দ্র সান্যাল গোস্বামী

 

ওঁ সর্ব্ব-মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থ-সাধিকে
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।। 

আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী আমাদের পূর্বপুরুষগণের কিছু মানুষ সিন্ধু নদীর নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতেন তাই সারা বিশ্বের কাছে প্রচলিত ভাষায় আমরা হিন্দু হিসেবে পরিচিত শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জগন্মাতা বিষ্ণু শক্তি স্বরূপিণী মা মহামায়ার শক্তি পূজা বছরে দুই বার মা মহামায়ার অর্চনা করা হয় বসন্ত কালে বাসন্তী পূজা আর শরৎ কালে শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা শরৎকালের দুর্গাপূজাকে আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শারদীয়া দুর্গোৎসব হিসেবে উদযাপন করে থাকি শ্রী শ্রী দুর্গাদেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন মা মহামায়া জীবনের দুর্গতি নাশ করেন বলেও তাঁকে দুর্গা (দুর্গতি নাশিনী) বলা হয় যে শক্তি দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ, ভয় শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেন তিনিই দুর্গা বসন্তকালে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা বাসন্তী পূজা নামে অভিহিত ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র ব্রহ্মার পরামর্শে রাবণকে বধ করার জন্য দক্ষিণায়ন কালে দেবী দুর্গার পূজা করেন সেই থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শরৎকালে শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা করে থাকেন উত্তরায়ণের কাল দেব-দেবীর জাগরণ কাল দক্ষিণায়ন কাল দেব-দেবীর নিদ্রা কাল মাঘ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ এবং শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত মাস দক্ষিণায়ন কাল শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা দুর্গতি নাশিনী মা মহামায়ার শক্তি পূজা-অর্চনা দক্ষিণায়ন কালে শরৎকালে শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার জন্য পূজার পূর্বদিন সায়ংকালে বোধন করে মাকে জাগ্রত করে নিতে হয় দুর্গাপূজা বৈদিক পূজা মাকে জাগ্রত করার মন্ত্রে আছেরাবণস্য বধার্থায়, অকালে ব্রহ্মনা বোধো দেব্যাস্তয়ি...ভগবান শ্রী রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য অকালে দুর্গাপূজা করেছিলেন দেবতাদের স্তব-স্তুতিতে মা দুর্গা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়ে তাঁদের রক্ষা করেছেন আমরা মহিষ মর্দ্দিনী রূপের পূজা করে থাকি স্তুতিতে আছে- “প্রভাতে : স্মরেন্নিত্যং দুর্গা দুর্গাক্ষর দ্বয়ম আপদস্তস্য নশ্যন্তি তম: সূর্যোদয়ে যথাদুর্গাপূজা করলে মনোস্কামনা পূরণ সর্বসিদ্ধি লাভ হয়

সাত্ত্বিক ভাবে দুর্গাপূজা করতে হয় বৈদিক রীতি অনুসারে পূজার্চনা, স্তব, স্তুতি, দেবী সূক্ত, দেবী মাহাত্ম্য, শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠও অন্যান্য করতে হয়

দেবত্ব, ধর্ম, সত্য, সাত্ত্বিকতা অন্যান্য সব বাঁচিয়ে রাখতে হলে চাই শক্তি সে শক্তি আসে সর্বশক্তির আধার দুর্গাদেবী থেকে মহর্ষি মার্কণ্ডেয় এই পুরাণের বক্তা এবং ক্রৌষ্টকি ভাগুরি হলেন শ্রোতা শ্রী শ্রী চণ্ডী মার্কণ্ডেয়-পুরাণ অন্তর্গত এই শ্রী গ্রন্থে ১৩টি অধ্যায়, ৭০০টি মন্ত্র ৫৭৮টি শ্লোক আছে এক সময়ে রাজ্য হারা হয়ে চৈত্র বংশের রাজা সুরথ স্ত্রী-পুত্রাদি দ্বারা বিতাড়িত হয়ে ধনী বৈশ্য সমাধি একটি তপোবনে আশ্রয় নিলেন মায়ার কারণে রাজা সুরথ বৈশ্য সমাধি রাজ্যের প্রজা অন্যান্যদের জন্য চিন্তিত দুই জনে পরামর্শ করে তপোবনে সাধনারত মুনি মেধার নিকটে গেলেন তাঁরা মুনিবরের কাছে এই মায়ার কারণ জানতে চাইলেন মেধা মুনি তাঁদের দুজনকে বললেন- সব হচ্ছে মা মহামায়ার মায়া পূজা-অর্চনা, আরাধনা-তপস্যা করে মা মহামায়াকে তুষ্ট করতে পারলে তিনি মায়ার পর্দা সরিয়ে নিবেন মেধা মুনি বললেন- একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার স্তবে তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা আবির্ভূত হয়ে নিদ্রারূপিণী দেবী ভগবতী যোগমায়া রূপী শ্রী শ্রী দুর্গা মধু কৈটভ দুই অসুরকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে দেবী মহিষাসুর সৈন্যদের বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে শুম্ভ নিশুম্ভ দুই অসুর ভাইকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে অসুর ধূম্রলোচনকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে শুম্ভ-নিশুম্ভের দুই সেনাপতি চণ্ড মুণ্ডকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে অসুর রক্তবীজকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে অসুর নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন আর একবার দেবতাদের স্তবে তুষ্ট হয়ে অসুর শুম্ভকে বধ করেছিলেন দেবীর কৃপা লাভের পর দেবতারা দেবীর স্তব মাহাত্ম্য কীর্তন করেছিলেন ঋষি মেধা রাজা সুরথ বৈশ্য সমাধির কাছে এইভাবে দেবীর মাহাত্ম্য আবির্ভাবের কথা বললেন সেই দেবী বিষ্ণুমায়া মহামায়ার প্রভাবেই সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড চলছে তাঁর দয়াতেই তত্ত্বজ্ঞান লাভ হয় তাঁর দয়াতেই সুখ-ভোগ, স্বর্গ, মুক্তি লাভ হয় 

 শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর মাহাত্ম্য কথা শ্রবণ করে রাজা সুরথ বৈশ্য সমাধি নদীর তীরে বসে মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি করে দেবী সূক্ত জপ অন্যান্য রীতি পদ্ধতি অনুসারে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর আরাধনা-তপস্যা করলেন তিন বছর তপস্যার পর তাদের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গা তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হলেন শ্রী শ্রী দুর্গাদেবী তাঁদেরকে বর চাইতে বললেন রাজা সুরথ ইহ জন্মে নিজের শক্তি দ্বারা শত্রু সৈন্য বিনাশ করিয়া তাঁর হারানো রাজ্য ফিরে পাওয়ার পর জন্মে অক্ষয় রাজ্য পাওয়ার বর চাইলেন সমাধি বৈশ্যের আর সংসারের দিকে আকর্ষণ ছিল না তিনি চাইলেন পরম জ্ঞান, 'আমি আমার' অভিমান নাশ তত্ত্বজ্ঞান, ব্রহ্ম জ্ঞান মুক্তি যাতে সংসারের সবকিছুর মায়া কেটে যায় শ্রী শ্রী দুর্গাদেবী বললেন- “তথাস্তু মায়ের কৃপায় তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ হলো মানুষেরা যদি ভক্তিভরে দেবী দুর্গার আরাধনা করে তখন মা তাদের দুর্গতি নাশ করেন দুর্গতি নাশিনী বলে তাঁর নাম দুর্গা নিত্য বর্তমান রূপী শ্রী শ্রী দুর্গাদেবী সপরিবারে স্বামী শিবের সাথে কৈলাসে থাকেন প্রথম পূজা অর্থাৎ সপ্তমী পূজার পূর্ব সায়ংকালে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ অধিবাস করা হয় কল্পারম্ভ দিনে মা (সপ্তমী পূজার দিন) পুত্র-কন্যাসহ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন মৃন্ময়ী মূর্তিকে বৈদিক মন্ত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে চিন্ময়ী করা হয় দেবী মাহাত্ম্য শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে মা মহামায়া বলেছেন- “তয়াস্মাকং বরো দত্তো যথাপৎসু স্মৃতাখিলাঃ ভবতাং নাশয়িষ্যামি তৎক্ষনাৎ পরমা পদঃ।।” (শ্রী শ্রী চণ্ডী /)

অর্থাৎ- তোমরা আমাকে বিপদকালে স্মরণ করলেই আমি তৎক্ষণাৎ তোমাদের বিপদ সমূহ বিনাশ করব

মায়ের নিজ মুখে অঙ্গীকার করা আছে তিনি দেবতা আমাদের রক্ষা করবেন আমাদের কর্তব্য হলো মায়ের পূজা-অর্চনা করা এবং মায়ের শরণাগত হয়ে থাকা শ্রীশ্রী মা দুর্গা যুগে যুগে বিভিন্ন বিপদে স্বয়ং আবির্ভূত হয়ে দেবতা মানুষদের রক্ষা করেছেন তিনি বিপদনাশিনী সবাইকে বিশ্বাস রাখতে হবে যে প্রয়োজনের সময়ে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবী আমাদের সকল বিপদ হতে রক্ষা করবেন

।। ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।।

লেখক: বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার রতনকান্দি গ্রামের অধিবাসী

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon