ছন্দা আচার্য
ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের অলংকারের মধ্যে চুড়ি একটি প্রাচীন পরিচিত উপকরণ। বিশেষত শ্রাবণ মাসে সবুজ চুড়ি পরার প্রথা নিয়ে বহু নারীর মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এটি কি সত্যিই ধর্মীয় প্রথা, নাকি সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতি?
প্রথমেই বলা দরকার, শ্রাবণ মাস হিন্দু ধর্মে শিবপূজার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই সময়ে উপবাস, বিল্বপত্র অর্পণ, গঙ্গাজল দিয়ে মহাদেবের পুজো ইত্যাদি ধর্মীয় আচার পালিত হয়। তবে শাস্ত্রগ্রন্থে নারীদের সবুজ চুড়ি পরার বিষয়ে কোনও সরাসরি উল্লেখ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ সবুজ চুড়ি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়।
তাহলে এই প্রথার উৎপত্তি কোথা থেকে? সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, সবুজ রং প্রকৃতির উর্বরতার প্রতীক। শ্রাবণ মাস বর্ষাকালের শোভায় সজীব হয়ে ওঠে প্রকৃতি। সবুজের আধিক্য এই সময়ে প্রাণশক্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা দেয়। নারীরা সবুজ চুড়ি, সবুজ শাড়ি বা ওড়না পরে এই ঋতুর সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে নেন। এটি প্রকৃতির সঙ্গে সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য প্রকাশের এক ধারা।
মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক বা দক্ষিণ ভারতের কিছু অঞ্চলে শ্রাবণ মাসে বিবাহিতা নারীরা সবুজ চুড়ি পরে স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন। এর পেছনে বিশ্বাস—সবুজ মানে নবজীবন ও স্থায়িত্ব, যা দাম্পত্য সম্পর্কে শুভ সংকেত হিসেবে বিবেচিত। তবে এখানেও ধর্মীয় শাস্ত্রের নির্দেশ নেই; বরং এটি লোকাচার, যা সময়ের সঙ্গে ধর্মীয় আবহ পেয়েছে।
অন্যদিকে, শহুরে সমাজে আজ সবুজ চুড়ি ফ্যাশনের অংশে পরিণত হয়েছে। অনেকে ধর্মীয় আবহের কথা ভেবে নয়, বরং ঋতু ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া রাখতে এই সাজে অংশ নেন। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক ট্রেন্ড হিসেবেও দেখা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়—শ্রাবণে সবুজ চুড়ি পরা ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নয়, এটি মূলত লোকাচার ও সামাজিক রীতি, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য, উর্বরতা ও শুভতার প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সময়ের সঙ্গে এই রীতি উৎসবের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়, তবে এটিকে ধর্মীয় আচার বলা ঠিক হবে না।


