বিদেশমন্ত্রী চীনে বৈঠকে প্রতিপক্ষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'ধর্মীয় বিভেদ তৈরির' জন্যই পহেলগাম আক্রমণ চালানো হয়েছিল; সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই SCO প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
সোমনাথ চৌধুরী :
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিলের পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতিতে আঘাত হানা এবং "ধর্মীয় বিভাজন তৈরির" লক্ষ্যে চালানো হয়েছিল, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর চীনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলের (SCO - CFM) বৈঠকে এমনটাই বলেন তিনি, যেখানে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সহ অন্যান্য এসসিও (SCO) মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন, তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সহায়তার আহ্বান জানান।
এদিন মঙ্গলবার, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং রাশিয়া, ইরান, বেলারুশ এবং মধ্য এশিয়ার দেশ গুলির অন্যান্য এসসিও (SEO) মন্ত্রীরা বেইজিংয়ে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করেন পাশাপাশি ট্রেনে করে তিয়ানজিনে এসসিও (SEO) বৈঠকে যোগ দেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সাথেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন, যাদের দুজনেরই সাথে তিনি এই মাসের শুরুতে ব্রাজিলে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে দেখা করেছিলেন।
সন্ত্রাসবাদের উল্লেখ নিয়ে মতপার্থক্যের পর এসসিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে যৌথ বিবৃতি জারি করতে ব্যর্থ হওয়ার এক মাস পর এস জয়শঙ্করের এই মন্তব্য। যদিও এসসিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পরেও কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি, কর্মকর্তারা বলেছেন যে এটি করার কথা ছিল না, কারণ সাধারণত বিদেশমন্ত্রীদের ৩১ আগস্ট-১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক নেতাদের জন্য শীর্ষ সম্মেলনের এজেন্ডা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে তিয়ানজিন ভ্রমণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যা ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর তার প্রথম এ জাতীয় সফর হবে।
এস জয়শঙ্কর সভায় তার বক্তৃতায় বলেন "তিনটি খারাপ বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য SCO প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল," যেখানে তিনি পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করেন যেখানে ২৬ জন ব্যক্তি, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক, ধর্মীয়ভাবে চিহ্নিত হয়ে নিহত হন। "এটি ইচ্ছাকৃতভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য পরিচালিত হয়েছিল, একই সাথে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করার জন্যেও", তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদের প্রতিরোধের বিষয়ে SCO-কে "আপসহীন অবস্থান" নেওয়ার আহ্বান জানান এবং এপ্রিল মাসে উক্ত হামলার বিষয়ে জারি করা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন।
এসসিও সচিবালয়ের জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সদস্যরা "এসসিও সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি, যার মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিষয় এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত, নিয়ে মতবিনিময় করেছেন", তবে সন্ত্রাসবাদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেননি।
তিনি বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন এবং চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি হান ঝেং-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তিনি ভারত-চীন সম্পর্কের "ক্রমাগত স্বাভাবিকীকরণ" সম্পর্কে প্রশংসা করেন। বিদেশমন্ত্রী বলেন যে তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নয়ন সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং'কে অবহিত করেছেন। "আমি এই বিষয়ে আমাদের নেতাদের নির্দেশনাকে মূল্যবান বলে মনে করি", তিনি মোদী এবং জিনপিং'র কথা উল্লেখ করে এক্স-এ পোস্ট করেছেন।
পাশাপাশি, আফগানিস্তান যা একটি SCO পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র কিন্তু ২০২১ সালে তালিবান শাসন কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে আমন্ত্রিত হয়নি, তার কথা উল্লেখ করে শ্রী জয়শঙ্কর বলেন যে "আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বাধ্যবাধকতা আফগান জনগণের মঙ্গলের জন্য [ভারতের] দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ দ্বারা বোঝানো হয়েছে" এবং SCO সদস্যদের উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত-আফগানিস্তান বাণিজ্যের ট্রানজিট বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের সমালোচনা করে জয়শঙ্কর বলেন যে "SCO দেশ গুলির মধ্যে নিশ্চিত ট্রানজিটের অভাব... অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার পক্ষে গুরুত্বকে দুর্বল করে", এবং ইরানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক উত্তর দক্ষিণ পরিবহন করিডোর (INSTC) এর পক্ষেও এদিন তিনি কথা বলেছেন।

