ছন্দা আচার্য
প্রযুক্তির জোয়ারে ভেসে যাওয়া এই যুগে যখন সবকিছু মুহূর্তে মুঠোফোনে পৌঁছে যায়, তখনো সমাজের এক শ্রেণির মানুষ রয়েছেন, যাঁরা চুপচাপ, পরিশ্রমে, বিশ্বস্ততায় এবং দায়িত্ববোধে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন পোস্টাল ওয়ার্কার, অর্থাৎ ডাক বিভাগে কর্মরত সেই সব মানুষ, যাঁরা দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও পৌঁছে দেন বার্তা, আশ্বাস, খবর ও ভালোবাসা। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতেই প্রতি বছর ১ জুলাই পালিত হয় National Postal Worker Day।
একসময় চিঠি ছিল মানুষের সবচেয়ে বড় আবেগের বাহক। সেই চিঠি হয়তো ছিল প্রেমের, হয়তো খবরের, কিংবা হয়তো নিয়োগপত্রের। আর সেই চিঠি যে হাতে হাতে পৌঁছে যেত ঠিক ঠিক গন্তব্যে, তিনি ছিলেন সেই পোস্টম্যান—যাঁকে দেখে মানুষ ভাবত, “আজ বুঝি খবর এসেছে!” আজকের দিন সেই মানুষের কাজকে সম্মান জানাবার দিন, যাঁর জীবন রোদ-বৃষ্টি, পাহাড়-পথের সঙ্গে লড়াই করে কেটেছে শুধু দায়িত্ব পালনে।
পোস্টাল ওয়ার্কারদের কাজ শুধুই চিঠি বিলি করা নয়, তাঁদের কাজের পরিধি অনেকটাই বিস্তৃত। ডাকঘর এখন শুধু চিঠি বা পার্সেল নয়, সরকারী নথি প্রেরণ, ব্যাংকিং পরিষেবা, রেশন কার্ড বা আধার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পৌঁছে দেয়। যেসব স্থানে ইন্টারনেট পৌঁছেনি, সেই গ্রাম বা দুর্গম এলাকায় পোস্টম্যানই আজও সরকারি ও সামাজিক সংযোগের একমাত্র মাধ্যম।
তাঁদের কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নিয়মিততা। সকাল হোক বা সন্ধ্যা, বর্ষা হোক বা খরা—তাঁরা পথ পাড়ি দেন চুপচাপ, হাতে একটা থলে, কাঁধে একটা দায়িত্ব। অনেক সময় তাঁরা হয়তো একটা ফোনও ব্যবহার করেন না, তবু ঠিক বুঝে যান কোন বাড়িতে কে আছে, কাকে চিঠি দিতে হবে, কাকে ভালোবাসা পৌঁছে দিতে হবে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকেই মনে করেন ডাকব্যবস্থা আজ ‘অপ্রাসঙ্গিক’। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আজও সরকারি নথিপত্র, আইনি নোটিশ, গ্রামীণ ব্যাংক পরিষেবা, নির্বাচনী পরিচয়পত্রের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডাকব্যবস্থার মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। আর এই পুরো ব্যবস্থার স্তম্ভ হলেন সেই পোস্টাল ওয়ার্কার।
National Postal Worker Day কেবল একটি ‘কাজের শ্রদ্ধা’ নয়, এটি এক ইতিহাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এটি সেই পা-চলা যোদ্ধাদের অভিবাদন জানানোর দিন, যাঁরা শব্দের বদলে নিরবতা, গ্ল্যামারের বদলে কর্তব্যে বিশ্বাস করেন।
এই দিনে তাই আমাদের কর্তব্য, অন্তত একবার মনে করে ধন্যবাদ জানানো—সেই চিঠির দূতকে, যিনি হয়তো আমাদের জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন বার্তাটি সময়মতো আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, নিরব ভাষায়, বিশ্বস্ত পদচিহ্নে।


