যোগমায়া আচার্য
একটি শিশু জন্মের মুহূর্ত থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রার শেষ প্রহর পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এক ব্যক্তি ছায়ার মতো পাশে থাকেন—তিনি চিকিৎসক। রোগ, যন্ত্রণা, অনিশ্চয়তার মতো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু ওষুধ দেন না, দেন ভরসা, সাহস ও আশার আলো। সেই সব আত্মনিবেদিত চিকিৎসকদের শ্রদ্ধা জানাতেই প্রতিবছর ১ জুলাই পালিত হয় National Doctor’s Day। এটি শুধুমাত্র একটি পেশার উৎসব নয়, এটি হল কর্তব্য, মানবিকতা ও নিঃস্বার্থ সেবার এক অনন্য সম্মান প্রদর্শন।
ভারতে এই দিনটি বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ ড. বিধানচন্দ্র রায়-এর জন্ম ও মৃত্যুদিন উপলক্ষে পালিত হয়। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম সারির চিকিৎসকদের অন্যতম, যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন। চিকিৎসক হিসেবে তাঁর জীবনের আদর্শ, নিষ্ঠা ও মানবিকতা আজও অনুপ্রেরণার উৎস।
চিকিৎসা পেশা কখনোই ছিল কেবল চাকরি নয়, এটি একধরনের ব্রত। দিনে-রাতে, উৎসবে-দুর্যোগে, শান্তি কিংবা সংকটে—ডাক্তাররা থাকেন সামনে, সেবার ফ্রন্টলাইনে। করোনা মহামারির সময় আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম এই পেশার সাহসিকতা। অজানা ভাইরাসের মোকাবিলায় নিজের পরিবার, জীবন, সময় সবকিছু ত্যাগ করে ডাক্তারদের যুদ্ধ ছিল অব্যাহত। অনেকেই নিজের জীবন হারিয়েছেন মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের সমাজে চিকিৎসকদের সম্মান অনেক সময় প্রশ্নের মুখে পড়ে। কখনও ভুল বোঝাবুঝি, কখনও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় অবিশ্বাসের নামে। অথচ একবার ভাবুন, একজন চিকিৎসক প্রতিটি রুগীর জন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দেন—কারণ তাঁর কাছে পেশা মানেই দায়িত্ব, রোগী মানেই বিশ্বাস।
আজকের দিনে প্রয়োজন চিকিৎসকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ নতুন করে জাগিয়ে তোলা। এই পেশায় প্রবেশ মানেই একটি জীবন শুধুই নিজের জন্য নয়—এটি রোগীর চোখের জল মুছতে শেখা, ক্লান্ত শরীরে দাঁড়িয়ে থেকে জীবন রক্ষা করার লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
Doctor’s Day আমাদের মনে করিয়ে দেয়, হাসপাতালের সাদা কোট শুধু পেশাগত পরিচয় নয়, এটি দায়িত্ব, মানবতা এবং নির্ভরতার প্রতীক। এই দিনে আমাদের কর্তব্য শুধু ধন্যবাদ জানানো নয়, বরং সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা—যেখানে চিকিৎসক ও রোগী একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন।
জীবন বাঁচানোই যেখানে ব্রত, সেখানে কোনো ছুটির দিন নেই। National Doctor’s Day হোক সেই উপলক্ষ, যখন আমরা এই নীরব যোদ্ধাদের বলি—আপনারাই সত্যিকারের নায়ক, যাঁরা জীবনের প্রতিটি ধ্বংসস্তূপে আশার এক নতুন গল্প লেখেন।


