ড. নুরুল ইসলাম
'তুমি মুক্ত হও,আপনার মধ্যে তুমি বদ্ধ থেকো না।ভূমার মধ্যে তোমার প্রকাশ হোক।'
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
('নববর্ষ' প্রবন্ধ, মূল গ্রন্থ 'বিচিত্র প্রবন্ধ', প্রথম প্রকাশ, শ্রাবণ ১৩০৮, আগস্ট, ১৯০১, বঙ্গদর্শন পত্রিকা )
সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে মানুষ আলোর দিশারী। তার নিজস্ব ক্ষুদ্র গণ্ডির অভিজ্ঞতা থেকে ক্রমে ক্রমে পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা লাভের মধ্য দিয়ে নিজেকে উন্নীত করেছে এবং মানুষের কাছে সভ্যতা সংস্কৃতির নতুন নতুন বার্তা এনে দিয়েছে। অরণ্যচারী মানুষ একদিন ধীরে ধীরে পশুপালন কৃষিকার্য, শিল্প প্রযুক্তির দিকে ক্রমশ এগিয়ে এসেছে। উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থারও ঘটেছে পরিবর্তন। মানুষ যেমন বিজ্ঞান প্রযুক্তির দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে ঠিক তেমনি তার মন থেকে অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কারকে প্রাণপণের চেষ্টা করেছে সরিয়ে ফেলতে। অন্ধকার থেকে আলোতে, ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে বৃহত্তর পরিধিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বৃহৎ মানুষ বড় মনের মানুষ, মানবতাবাদী মানুষ প্রচেষ্টা চালিয়েছে প্রতিনিয়ত। নদীস্রোতে মৃতদেহ ঘাস পাতা জঞ্জাল কচুরি পান্না ভেসে যায়,কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী, যাদের মধ্যে সামান্য প্রাণশক্তি আছে তারাও চেষ্টা করে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সভ্যতা সংস্কৃতির প্রচেষ্টাই হচ্ছে প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে ক্রমশ উন্নত জীবনবোধ মূল্যবোধে এগিয়ে যাওয়া। ক্ষুদ্র আমি কে বড় আমিতে পরিণত করা। বিজ্ঞান চিন্তা বিজ্ঞানমনস্কতা মানুষকে ক্রমে ক্রমে মানবতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে অন্যদিকে অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কার মানব সভ্যতা সংস্কৃতিকে পেছনের দিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যায়, মানুষকে অসভ্য বর্বর অসামাজিক অমানবিক করে তোলে।
ভারতরত্ন বিধান চন্দ্র রায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিকিৎসক শিক্ষাবিদ সংস্কৃতি অনুরাগী বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুদিন পয়লা জুলাই। জন্ম ১৮৮২ সালের পয়লা জুলাই পাটনার বাঁকিপুরে । মৃত্যু ১৯৬২ পয়লা জুলাই কলকাতায়। এই দিনটি ভারতে চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা হয় পরম শ্রদ্ধা সহকারে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান তাঁরই নামে প্রদান করা হয়।
পিতা প্রকাশ চন্দ্র রায় ছিলেন বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম স্বাধীনচেতা যশোরের প্রতাপাদিত্য রায়ের বংশধর এবং মাতা অঘোরকামিনী দেবী ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের জমিদার বিপিনচন্দ্র বসুর কন্যা। ধর্মপরায়ণা ঠাকুরমা নাম দেন ভজন , ব্রাহ্ম সমাজের নেতা কেশব চন্দ্র সেন তাঁর নামকরণ করেন বিধানচন্দ্র ।
তিনি মনে করতেন, চিকিৎসা করতে গিয়ে মানুষের মনের গভীর অনুভূতিগুলি বোঝা তাঁর পক্ষে সহজ হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তীকালেও প্রশাসক হিসেবে তাঁর কাজে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ লোকের আর্থিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে যা খুব জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি কলকাতায় থাকলে রোজ সকালে বাড়িতে বিনা পয়সায় ১৬ জন করে রোগী দেখতেন।আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ উপলব্ধি ছিল তাঁর। বিধানচন্দ্র বলেতেন,রোগীর চিকিৎসা করার সময়ে একজন চিকিৎসক নিজের আরাম-আয়েশ-স্বার্থের কথা ভাবেন না। বৃহত্তর পরিসরে মানুষের জন্য প্রকৃত কাজ করতে চাইলেও তেমনই নিজের চাওয়া-পাওয়া, লোভ-লালসা ভুলতে হবে।
নিঃস্বার্থ পরোপকারের শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন বাবা প্রকাশচন্দ্রের কাছে। বিধানচন্দ্র তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তাঁর উপরে দুই দাদা ও দুই দিদি। বিধানচন্দ্রের জীবনে তাঁর পিতার প্রভাব ছিল গভীর ও ব্যাপক।মাথা নিচু করতে না-চাওয়ার দৃঢ়তা বিধানচন্দ্রের চরিত্রেরও একটি বড় দিক, তা তিনি পান তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে।
তাঁর মা অঘোরকামিনী দেবী ছিলেন আর এক মহীয়সী নারী। বিয়ের পরে স্বামীর উৎসাহে লেখাপড়া শিখেছেন। তার পরে নিজে মহিলাদের শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গিয়েছেন। কাজ করেছেন শিশু, অনাথ ও দরিদ্রদের জন্য। তবে দীর্ঘজীবন তিনি পাননি। তাঁর মৃত্যুর সময়ে বিধানচন্দ্র চতুর্দশবর্ষীয় বালকমাত্র।
১৯০১ সালে পাটনা কলেজ থেকে ম্যাথমেটিক্সে অনার্স পাশ করে চলে আসেন কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা ডাক্তারিতে ভর্তি হবেন এই আশায়। সম্বল মাত্র কয়েকটি টাকা।প্রথমে সুযোগ পেয়ে গেলেন কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য, কিন্তু এখানেও তার ডাক্তারি পড়া সম্পূর্ণ হয়নি। এম বি মৌখিক পরীক্ষায় ইংরেজ প্রফেসর পিক তাকে ফেল করিয়ে দেন একটি পথ দুর্ঘটনায় তাঁর হয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ার জন্য।
ডাক্তারি পড়ার সময় কখনো তাকে ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে, আবার কখনো দৈনিক আট টাকার বিনিময়ে বাড়িতে পুরুষ নার্স হিসেবে, আবার কখনো কোনো ডাক্তারের সহকারীরূপে কাজ করেছেন তিনি।
LMS, MB পাস করে ডাক্তার রায় লন্ডনে যেতে চাইলেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে সবেতন ছুটি চাইলে চাইলে তা নাকচ হয়ে যায়। মাত্র বারোশো টাকা হাতে নিয়ে তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন জাহাজে। সেখানেও বিপত্তি ঘটে ,তিনি ছিলেন কেবিনের যাত্রী,সাহেব সহযাত্রীর জন্য তাকে বহু বাধা বিঘ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
লন্ডনের কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়েও তিনি সমস্যার সম্মুখীন হন ৩০ বারের চেষ্টায় তিনি সেই কলেজে ভর্তি হতে পারেন এবং দু'বছর তিন মাস সময়ের মধ্যে এমআরসিপি, এফআরসিএস পরীক্ষায় পাশ করে চমকে দেন। কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে অসামান্য স্বীকৃতি লাভ করেন,তার সুপারিশে অনেকেই সেখানে ভর্তি সুযোগ পেতেন।
কলকাতায় ফিরে এসে মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক পদে যোগদান করতে চাইলে তা তিনি পাননি,তাকে কয়েক বছর পুলিশের ফার্স্ট এইড এবং অ্যাম্বুলেন্স প্রশিক্ষণের কাজের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়। ইতিমধ্যে তিনি জনপ্রিয় ও দক্ষ চিকিৎসক রূপে অসাধারন খ্যাতি অর্জন করেন।
*মহানাগরিকরূপে ডাক্তার বিধানচন্দ্র*
রাজনৈতিক জীবনে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উভয়েই ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস তাকে কলকাতা কর্পোরেশনে প্রথমে ওল্ডার ম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে আনেন। তার কিছুদিন পরেই তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রায়ের প্রস্তাব মত মহানগরীক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালে বিনয় বাদল দীনেশ কুখ্যাত পুলিশ অফিসার কর্নেল শিমশানকে হত্যা করেন এবং পরের বছর দীনেশকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় মেয়র হিসেবে কলকাতা কর্পোরেশনে শোক প্রস্তাব আনেন, সেই সময় যা ছিল একেবারে অকল্পনীয়। এই ঘটনার পর কুখ্যাত পুলিশ অফিসার চার্লস টেগর্ড মন্তব্য করেন,কলকাতা কর্পোরেশন সন্ত্রাসবাদীদের আড্ডাখানা।
*বন্দী জীবনে ডাক্তার বিধানচন্দ্র*
১৯৩০ সালে ডাক্তার বিধানচন্দ্রকে রাজনৈতিক কারণে বন্দী করা হয় এবং তার ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকার সময় সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল বদল ঘটিয়ে দেন। সেখানে তিনি প্রত্যেকদিন একশর উপর রোগী দেখতেন। যে সমস্ত ওষুধ জেলখানার হাসপাতালে পাওয়া যেত না তিনি প্রত্যেক রবিবারে তাকে দেখতে আসা তার দাদা সুবোধ রায়ের হাতে সেই সমস্ত ওষুধের তালিকা ধরিয়ে দিতেন যাতে সেখানকার রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। অনেক সময় তিনি জেলবন্দীদের আত্মীয়দেরও চিকিৎসা করতেন এবং অন্যান্য জেলখানা থেকে আসা সমস্ত বন্দিদেরও চিকিৎসার দায়িত্ব পড়ে তার হাতে। আলিপুর জেলে বন্দি থাকার সময়েই তিনি জার্মান ভাষা শিখে নেন রাজনৈতিকবন্দি কানাইলাল গাঙ্গুলীর কাছে।
*উপাচার্য ডাক্তার বিধানচন্দ্র*
১৯৪২ সালে ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলার নানা প্রান্তে নতুন কয়েকটি কলেজ স্থাপন করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ সহ আরো কয়েকটি বিষয়ের সূচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাংবাদিকতার কাজ নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করা,কেবল পাঠক বৃদ্ধি করা নয়।
*মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র*
স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালে ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি।সেই পদে তিনি সাড়ে চোদ্দ বছর অধিষ্ঠিত থাকেন। এই সময়কালে তাকে উদ্বাস্তু সমস্যা খাদ্য সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যার প্রবল মুখোমুখি হতে হয়। দুর্গাপুর কল্যাণী সল্টলেক ইত্যাদি শহর তারই হাতে প্রতিষ্ঠা পায়। তার মৃত্যুর পর সল্টলেক নগরীর নামকরণ করা হয় বিধান নগর। দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্প রাষ্ট্রীয় পরিবহন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয় তার হাতে। চিত্তরঞ্জন সেবা সদন কমলা নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল যাদবপুর টিবি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫৬ সালে বিধানচন্দ্র যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখন তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এখানে এসে কিছু কথাবার্তার সূত্রে তাঁকে রাশিয়ায় যাওয়াড় আমন্ত্রণ জানান এবং দীর্ঘ কথোপকথনের উপসংহারে ক্রুশ্চেভ একটি বিমান উপহার দিতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। পরিবর্তে বিধানচন্দ্র বলেছিলেন, ''দিতে হলে বরং চিকিৎসার কিছু উন্নত যন্ত্রপাতি আমাদের দিন।'' কাজ হয়েছিল।
*দক্ষ চিকিৎসক বিধানচন্দ্র*
ডাক্তার বিধান চন্দ্র দেশে-বিদেশে একজন নামকরা চিকিৎসক ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি মহাত্মা গান্ধী মতিলাল নেহেরু জহরলাল নেহেরু ইন্দিরা গান্ধী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল মৌলানা আবুল কালাম আজাদসহ অনেক বিখ্যাত মানুষেরই তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য চিকিৎসা পরামর্শদাতা। অসাধারণ ছিল তার পর্যবেক্ষণ শক্তি।
জহরলাল নেহেরু কঠিন ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে দিল্লি গিয়ে সাধারণ পেট পরিষ্কারের ওষুধ দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন তিনি। শ্রীমতি গান্ধীর অপারেশন তিনিই করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির দীর্ঘদিনের পিঠের ব্যথা তিনিই দূর করেন এর জন্য তাঁর কাছ থেকে নগর কলকাতার উন্নয়নে বিশেষ আনুকুল্য আদায় করে আনেন।
রোগীর কন্ঠস্বর, চলাফেরা, অঙ্গভঙ্গি চোখের দিকে তাকিয়েই তিনি অসুস্থতার কারণ ঠিক করে নিতে পারতেন। এই ব্যাপারে অনেক গল্প ছড়িয়ে আছে যা রীতিমতো উপন্যাস লেখার উপকরণ।
*শিক্ষা সংস্কৃতির আঙিনায় ডাক্তার বিধানচন্দ্র*
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী চরম আর্থিক সংকটের কারণে শুটিং বন্ধ হয়ে গেলে সরকার সিনেমার প্রযোজনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিশ্ববরেণ্য নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করকে তিনি সরকারি তহবিল থেকে অনুদান দেন। কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকীতে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশের উদ্যোগ নেন তিনি। তারই প্রচেষ্টায় নানা সময়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ পুরুলিয়া রহড়া নরেন্দ্রপুর মিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়।
*রাজনৈতিক সৌজন্যে ডাক্তার বিধানচন্দ্র*
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিচার-বিশ্লেষণ করলে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ ছিল অসাধারণ। তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বামপন্থী নেতা জ্যোতি বসু ছিলেন বিরোধীদলের নেতা। নানা বিষয়েই তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বাক বিতন্ডা হত। কিন্তু পারস্পরিক রাজনৈতিক সৌজন্য কখনো কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয়নি। একবার জ্যোতি বসুর হাত ফুলে যাওয়ায় ডাক্তার নারায়ণ চন্দ্র রায় ফাইলেরিয়া হয়েছে মনে করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন।ডাক্তার রায় রক্ত পরীক্ষা করিয়ে সামান্য ওষুধে তাকে সারিয়ে তোলেন।
ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে জ্যোতি বসু প্রতিবাদ সভায় যাচ্ছেন, বিধানচন্দ্র রায় গাড়িতে যেতে যেতে দেখে তিনি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বললেন খালি পেটে আন্দোলন হয় না এস টিফিন বক্সে কয়েকটা লুচি আছে। দুজনে মিলে খাই।তারপর তুমি যা খুশি বলো বিধান রায়ে নামে মিটিংয়ে। খাদ্য আন্দোলনের সময় জ্যোতি বসুর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়, বিধান রায় সেই সময়ে জ্যোতি বসুকে বলেন তুমি কয়েকদিন বিধানসভায় থেকে যাও তোমার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছি।
আর এস পি দলের নেতা যতীন চক্রবর্তীর ছিলেন তার তীব্র সমালোচক অথচ ডাক্তার রায় তাকে জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
১৯৬১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী তিনি ভারতরত্ন পুরস্কারে ভূষিত হন৷ ১৯৬২ সালের পয়লা জুলাই ৮০ বছর বয়সে জন্মের দিনেই ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের মৃত্যু হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
"এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ,
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।"
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর মৃত্যু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই চরণ দুটি লিখেছিলেন, শোকপ্রকাশ করে। দেশবন্ধুর শিষ্য বিধানচন্দ্র রায় সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি সমান প্রাসঙ্গিক আজও।
*গ্রন্থ সূত্র - তথ্যপঞ্জি*
১ নন্দদুলাল ভট্টাচার্য, কর্মযোগী বিধানচন্দ্র ২০০৪
২ দ্য টেলিগ্রাফ ১০, আগস্ট ২০১২
৩ কেপি থমাস, ১৯৫৫
৪ ইন্ডিয়া টুডে, ১ জুলাই, ২০১৭
৫ সুমিত কুমার হিন্দিতে, ২০২১
৬, বাংলার চিকিৎসক মুখ্যমন্ত্রী দ্য স্টেটসম্যান ৩০ জুন ২০১৬
৭ নিখিল সেনগুপ্ত
৮ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৯ গৌরকিশোর ঘোষ
১০ শরৎ চক্রবর্তী প্রমুখ।

