সন্ন্যাসী কাউরী
ভারতের ইতিহাসে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে ৩০শে জুন দিনটি । প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয় 'হুল দিবস', যা আদিবাসী সমাজের, বিশেষ করে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর এক রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের স্মারক। 'হুল' শব্দের অর্থ 'বিদ্রোহ' বা 'মুক্তিযুদ্ধ'। প্রতি বছর ৩০ শে জুন 'হুল দিবস' পালন করা হলেও, এই দিনটি কেবল একটি বিদ্রোহের বার্ষিকী নয়, বরং আদিবাসী সমাজের আত্মমর্যাদা, অধিকার এবং ঔপনিবেশিক শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের আপসহীন সংগ্রামের প্রতীক। ভারতের ইতিহাসে 'হুল দিবস' পালনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে। ১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন ভাগলপুরের (সাঁওতাল পরগনার) ভগনাডিহি গ্রামের এক বিশাল জনসমাবেশে সিধু, কানু, চাঁদ এবং ভৈরব – এই চার মুর্মু ভাইয়ের নেতৃত্বে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আদিবাসী সাঁওতাল ব্রিটিশ শাসন এবং জমিদার-মহাজনদের সীমাহীন শোষণের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে এটি শুধুমাত্র সাঁওতালদের বিদ্রোহ ছিল না, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম সুসংগঠিত গণসংগ্রাম গুলির মধ্যে অন্যতম। এই বিদ্রোহ আদিবাসীদের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জল জমি জঙ্গলের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক শক্তিশালী প্রতীক। আদিবাসী জনজাতির মানুষ সাধারণত প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা সহজ-সরল মানুষ। তাঁরা জঙ্গল ও জমির ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু ব্রিটিশদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা এবং মহাজনদের চড়া সুদের হার ও বলপূর্বক জমি দখলের কারণে তাঁদের জীবন একটা সময় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হলে সাঁওতালরা পুরনো ঘরবাড়ি ছেড়ে রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু সেখানে স্থানীয় জমিদারদের শোষণ, নীলকর ও ইজারাদার সাহেবদের অত্যাচার, নতুন রেল লাইনের ঠিকাদারদের অসামাজিক কার্যকলাপ, খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরিতকরণ নানাভাবে আদিবাসী জনজাতির জীবন জর্জরিত হতে থাকে। ব্রিটিশ প্রশাসন ও জোরদার জমিদারদের সম্মিলিত অত্যাচারে আদিবাসী জনজাতিরা গবাদিপশু, জল, জমি, জঙ্গলের অধিকার, এমনকি স্ত্রী-সন্তানদেরও হারাতে শুরু করে। শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনার মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে আদিবাসী সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আদিবাসী সাঁওতালরা সহজ-সরল জীবন-যাপন ছেড়ে বেছে নেয় বিদ্রোহের পথ। শুরু হয় উলগুলান। তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাঁওতালরা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে নেমে পড়েন। সামিল হন সাঁওতাল সমাজের মেয়েরাও। মহাবিদ্রোহের আগে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছিল এই সাঁওতাল বিদ্রোহ। সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এই বিদ্রোহে মূলত নেতৃত্ব দেন। তাঁদের সাথে তাঁদের দুই বোন ফুলো ও ঝানোও এই আন্দোলনে অংশ নেন। প্রথমদিকে সাঁওতালরা বেশ কিছু সাফল্য লাভ করলেও, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সুসংগঠিত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের টিকে থাকা খুব কঠিন ছিল। ব্রিটিশরা সাঁওতালদের জঙ্গল থেকে বের করে আনার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে।
কিছু বিশ্বাসঘাতকের সাহায্যে ব্রিটিশরা সিধু ও কানুর গোপন আস্তানার খবর পেয়ে যায়। সিধু গ্রেপ্তার হন এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮৫৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কানুকে পাঁচকাঠিয়া বট গাছের নিচে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব।" আট মাস ধরে চলা এই বিদ্রোহ বা যুদ্ধে সাঁওতালরা পরাজিত হলেও ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা যান। এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করে। এই বিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। শুধু তাই নয় যত্নসাঁওতাল বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে অন্যান্য কৃষক সংগ্রাম ও সিপাহী বিদ্রোহেরও প্রেরণা জুগিয়েছিল।
হুল দিবস সাঁওতালদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হুল দিবস পালনের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের আত্মপরিচয় ও সংগ্রামের স্বীকৃতি পায়। এটি তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। হুল দিবস শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্মারক নয়, এটি আদিবাসী সমাজের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ন্যায়বিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই বিদ্রোহের কথা স্মরণ করে ও হুল দিবস পালনের মাধ্যমেই সাঁওতালরা তাদের দাবির প্রতি সচেতন হয়ে ওঠে। এই দিনটি ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরাখণ্ড, ছত্রিশগড়, আসাম, ত্রিপুরা এবং ওড়িশার বিভিন্ন অংশে বিশেষভাবে পালিত হয়। এই দিনে বিভিন্ন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিছিলের আয়োজন করা হয়, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আজও অন্যায়, অত্যাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি যোগায়।
ভারতবর্ষে প্রায় ১১ কোটির ওপর আদিবাসী মানুষের বসবাস। পশ্চিমবঙ্গে ৪০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ৬০ লক্ষের ওপর আদিবাসী বসবাস করেন। ত্রিপুরা, আসাম, মনিপুর, ছত্রিশগড়, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড রাজ্য গুলোতে মূলত আদিবাসীদের বসবাস।
জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য -কোল, ভিল , মুন্ডা , সাঁওতাল, ভূমিজ, ওঁরাও, খেড়িয়া, গারো, খাসিয়া,লেপচা, ভুটিয়া ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গের উড়িষ্যা ঝাড়খন্ড লাগোয়া পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলাতে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায় মানুষেরা বসবাস করেন । এছাড়া বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুর সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করেন।
ভারতের ইতিহাসে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে ৩০শে জুন দিনটি । প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয় 'হুল দিবস', যা আদিবাসী সমাজের, বিশেষ করে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর এক রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের স্মারক। 'হুল' শব্দের অর্থ 'বিদ্রোহ' বা 'মুক্তিযুদ্ধ'। প্রতি বছর ৩০ শে জুন 'হুল দিবস' পালন করা হলেও, এই দিনটি কেবল একটি বিদ্রোহের বার্ষিকী নয়, বরং আদিবাসী সমাজের আত্মমর্যাদা, অধিকার এবং ঔপনিবেশিক শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁদের আপসহীন সংগ্রামের প্রতীক। ভারতের ইতিহাসে 'হুল দিবস' পালনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে। ১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন ভাগলপুরের (সাঁওতাল পরগনার) ভগনাডিহি গ্রামের এক বিশাল জনসমাবেশে সিধু, কানু, চাঁদ এবং ভৈরব – এই চার মুর্মু ভাইয়ের নেতৃত্বে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আদিবাসী সাঁওতাল ব্রিটিশ শাসন এবং জমিদার-মহাজনদের সীমাহীন শোষণের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে এটি শুধুমাত্র সাঁওতালদের বিদ্রোহ ছিল না, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম সুসংগঠিত গণসংগ্রাম গুলির মধ্যে অন্যতম। এই বিদ্রোহ আদিবাসীদের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জল জমি জঙ্গলের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক শক্তিশালী প্রতীক। আদিবাসী জনজাতির মানুষ সাধারণত প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা সহজ-সরল মানুষ। তাঁরা জঙ্গল ও জমির ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু ব্রিটিশদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা এবং মহাজনদের চড়া সুদের হার ও বলপূর্বক জমি দখলের কারণে তাঁদের জীবন একটা সময় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু হলে সাঁওতালরা পুরনো ঘরবাড়ি ছেড়ে রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু সেখানে স্থানীয় জমিদারদের শোষণ, নীলকর ও ইজারাদার সাহেবদের অত্যাচার, নতুন রেল লাইনের ঠিকাদারদের অসামাজিক কার্যকলাপ, খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরিতকরণ নানাভাবে আদিবাসী জনজাতির জীবন জর্জরিত হতে থাকে। ব্রিটিশ প্রশাসন ও জোরদার জমিদারদের সম্মিলিত অত্যাচারে আদিবাসী জনজাতিরা গবাদিপশু, জল, জমি, জঙ্গলের অধিকার, এমনকি স্ত্রী-সন্তানদেরও হারাতে শুরু করে। শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনার মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে আদিবাসী সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আদিবাসী সাঁওতালরা সহজ-সরল জীবন-যাপন ছেড়ে বেছে নেয় বিদ্রোহের পথ। শুরু হয় উলগুলান। তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাঁওতালরা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে নেমে পড়েন। সামিল হন সাঁওতাল সমাজের মেয়েরাও। মহাবিদ্রোহের আগে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছিল এই সাঁওতাল বিদ্রোহ। সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এই বিদ্রোহে মূলত নেতৃত্ব দেন। তাঁদের সাথে তাঁদের দুই বোন ফুলো ও ঝানোও এই আন্দোলনে অংশ নেন। প্রথমদিকে সাঁওতালরা বেশ কিছু সাফল্য লাভ করলেও, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সুসংগঠিত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের টিকে থাকা খুব কঠিন ছিল। ব্রিটিশরা সাঁওতালদের জঙ্গল থেকে বের করে আনার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে।
কিছু বিশ্বাসঘাতকের সাহায্যে ব্রিটিশরা সিধু ও কানুর গোপন আস্তানার খবর পেয়ে যায়। সিধু গ্রেপ্তার হন এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৮৫৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কানুকে পাঁচকাঠিয়া বট গাছের নিচে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "আমি আবার আসব, আবার সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব।" আট মাস ধরে চলা এই বিদ্রোহ বা যুদ্ধে সাঁওতালরা পরাজিত হলেও ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা যান। এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করে। এই বিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। শুধু তাই নয় যত্নসাঁওতাল বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে অন্যান্য কৃষক সংগ্রাম ও সিপাহী বিদ্রোহেরও প্রেরণা জুগিয়েছিল।
হুল দিবস সাঁওতালদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হুল দিবস পালনের মাধ্যমে আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের আত্মপরিচয় ও সংগ্রামের স্বীকৃতি পায়। এটি তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। হুল দিবস শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্মারক নয়, এটি আদিবাসী সমাজের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ন্যায়বিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই বিদ্রোহের কথা স্মরণ করে ও হুল দিবস পালনের মাধ্যমেই সাঁওতালরা তাদের দাবির প্রতি সচেতন হয়ে ওঠে। এই দিনটি ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরাখণ্ড, ছত্রিশগড়, আসাম, ত্রিপুরা এবং ওড়িশার বিভিন্ন অংশে বিশেষভাবে পালিত হয়। এই দিনে বিভিন্ন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিছিলের আয়োজন করা হয়, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। আজও অন্যায়, অত্যাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি যোগায়।
ভারতবর্ষে প্রায় ১১ কোটির ওপর আদিবাসী মানুষের বসবাস। পশ্চিমবঙ্গে ৪০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ৬০ লক্ষের ওপর আদিবাসী বসবাস করেন। ত্রিপুরা, আসাম, মনিপুর, ছত্রিশগড়, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড রাজ্য গুলোতে মূলত আদিবাসীদের বসবাস।
জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য -কোল, ভিল , মুন্ডা , সাঁওতাল, ভূমিজ, ওঁরাও, খেড়িয়া, গারো, খাসিয়া,লেপচা, ভুটিয়া ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গের উড়িষ্যা ঝাড়খন্ড লাগোয়া পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলাতে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায় মানুষেরা বসবাস করেন । এছাড়া বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুর সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করেন।
বনাঞ্চল বা বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় সাধারণত আদিবাসী মানুষদের বসবাস। তাই সুপ্রাচীন কাল থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জল জমি জঙ্গলের ওপর অধিকার ।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ভারতবর্ষের প্রায় ১১ লক্ষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে বনবাসস্থান থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল । তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ। ভারতে বসবাসকারী হাজার হাজার আদিবাসী ও অন্যান্য জনজাতিকে উচ্ছেদ করার পেছনে আপাত কারণ খনি ও কলকারখানা । জীববৈচিত্র্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিল্পোদ্যোগীদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ ঝাড়খন্ডে কয়েক হাজার বনভূমি এলাকা দখল করে নিয়েছে আদানি কোম্পানি৷ এই রকমভাবে আদিবাসীদের বনভূমি আবাস কেড়ে নিয়ে খনি হয়েছে, বাঁধ হয়েছে, কারখানা হয়েছে ৷ অশিক্ষিত নিরীহ আদিবাসী মানুষেরা পেয়েছে শুধু অবিচার আর বঞ্চনা ৷ বিতর্কিত বন সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল লোকসভায় পাস করিয়ে নেয় কেন্দ্রের সরকার। অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জনজাতির মানুষ। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরও দেশের মূলবাসীরাই আজও শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত। ছত্রিশগড়ের বস্তার, পশ্চিমবঙ্গের দেউচা পাঁচামি, আসামের ডলু চা বাগান সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্পোরেটদের স্বার্থে আদিবাসী মানুষজনকে হত্যা ও উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
মনিপুরে আদিবাসী মহিলার ওপর পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা, মেদিনীপুরের ডেবরার প্রতিবাদী আদিবাসী শিক্ষককে পিটিয়ে খুন, আদিবাসী মহিলা ধর্ষণ, বীরভূমের আহমেদপুরে আদিবাসী দম্পতি পান্ডু হেমব্রম ও পার্বতী হেমব্রমকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন, ওই জেলায় খয়রাশোলে আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন, মধ্যপ্রদেশে চোর সন্দেহে এক আদিবাসী ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন, সিআরপিএফ এর গুলিতে আদিবাসী মানুষের মৃত্যুর ঘটনা সহ আদিবাসীদের ওপর অত্যাচারের নানান ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছ। এরকম পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসী জনজাতি তাদের নানান অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণত প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাস করা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষরা । নানান কারণে বিভিন্ন দেশে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখনো বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। জোরপূর্বক আদিবাসীদের ভূমি দখল, পাট্টা সময় মতো না দেওয়া, সামান্য উপটৌকন দিয়ে আদিবাসীদের ভুল পথে পরিচালনা করা, জল, জমি, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, ছোট জাত বলে ঘৃণার চোখে দেখা, সামাজিক বৈষম্য সহ নানান রকম সমস্যায় আদিবাসী সম্প্রদায় জর্জরিত। বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটা অংশের সরকারি আধিকারিকদের সহায়তায় অ-আদিবাসী মানুষজন জাল তপশীলি উপজাতি শংসাপত্র তৈরি করে, চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন প্রকৃত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন।
আদিবাসীদের কাছে হুল দিবস কেবল পালনীয় দিন নয়। এই দিনটি অন্যায়, অত্যাচার ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চয়ের দিন। জল জমি জঙ্গলের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ভারতবর্ষের প্রায় ১১ লক্ষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে বনবাসস্থান থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল । তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ। ভারতে বসবাসকারী হাজার হাজার আদিবাসী ও অন্যান্য জনজাতিকে উচ্ছেদ করার পেছনে আপাত কারণ খনি ও কলকারখানা । জীববৈচিত্র্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিল্পোদ্যোগীদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ ঝাড়খন্ডে কয়েক হাজার বনভূমি এলাকা দখল করে নিয়েছে আদানি কোম্পানি৷ এই রকমভাবে আদিবাসীদের বনভূমি আবাস কেড়ে নিয়ে খনি হয়েছে, বাঁধ হয়েছে, কারখানা হয়েছে ৷ অশিক্ষিত নিরীহ আদিবাসী মানুষেরা পেয়েছে শুধু অবিচার আর বঞ্চনা ৷ বিতর্কিত বন সংরক্ষণ (সংশোধনী) বিল লোকসভায় পাস করিয়ে নেয় কেন্দ্রের সরকার। অরণ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জনজাতির মানুষ। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরও দেশের মূলবাসীরাই আজও শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত। ছত্রিশগড়ের বস্তার, পশ্চিমবঙ্গের দেউচা পাঁচামি, আসামের ডলু চা বাগান সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্পোরেটদের স্বার্থে আদিবাসী মানুষজনকে হত্যা ও উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
মনিপুরে আদিবাসী মহিলার ওপর পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা, মেদিনীপুরের ডেবরার প্রতিবাদী আদিবাসী শিক্ষককে পিটিয়ে খুন, আদিবাসী মহিলা ধর্ষণ, বীরভূমের আহমেদপুরে আদিবাসী দম্পতি পান্ডু হেমব্রম ও পার্বতী হেমব্রমকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন, ওই জেলায় খয়রাশোলে আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন, মধ্যপ্রদেশে চোর সন্দেহে এক আদিবাসী ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন, সিআরপিএফ এর গুলিতে আদিবাসী মানুষের মৃত্যুর ঘটনা সহ আদিবাসীদের ওপর অত্যাচারের নানান ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছ। এরকম পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসী জনজাতি তাদের নানান অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণত প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাস করা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষরা । নানান কারণে বিভিন্ন দেশে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখনো বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। জোরপূর্বক আদিবাসীদের ভূমি দখল, পাট্টা সময় মতো না দেওয়া, সামান্য উপটৌকন দিয়ে আদিবাসীদের ভুল পথে পরিচালনা করা, জল, জমি, বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, ছোট জাত বলে ঘৃণার চোখে দেখা, সামাজিক বৈষম্য সহ নানান রকম সমস্যায় আদিবাসী সম্প্রদায় জর্জরিত। বর্তমান ডিজিটাল যুগে একটা অংশের সরকারি আধিকারিকদের সহায়তায় অ-আদিবাসী মানুষজন জাল তপশীলি উপজাতি শংসাপত্র তৈরি করে, চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন প্রকৃত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন।
আদিবাসীদের কাছে হুল দিবস কেবল পালনীয় দিন নয়। এই দিনটি অন্যায়, অত্যাচার ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চয়ের দিন। জল জমি জঙ্গলের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন।

