যোগমায়া আচার্য
১৮ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক আলো দিবস (International Day of Light)। ইউনেস্কো ২০১৮ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন শুরু করে, আলোর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও তার মানবসভ্যতায় অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। ২০১৫ সালে পালিত “আন্তর্জাতিক আলোর বছর”-এর সাফল্যের পর এ দিবসটি চালু করা হয়। আলোকবিজ্ঞানে অগ্রগতি, মানব উন্নয়ন, শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসা, শক্তি এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
আলোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাবআলো শুধু দৈনন্দিন জীবনকে আলোকিত করে না, এটি বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লেজার প্রযুক্তি, ফাইবার অপটিক্স, LED আলো, সোলার প্যানেল, এক্স-রে, আল্ট্রাভায়োলেট ও ইনফ্রারেড রশ্মি—এসব কিছুই আলোর ব্যতিক্রমী ব্যবহারের উদাহরণ। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ক্যানসার শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা, অপারেশন, চিকিৎসার আধুনিক পদ্ধতিতে আলোর ব্যবহার অপরিসীম। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি ইন্টারনেটকে করেছে গতিময় ও সাশ্রয়ী।
আলোর সামাজিক গুরুত্বআলো মানুষকে অজ্ঞতা থেকে জ্ঞানে, অন্ধকার থেকে আশায় এগিয়ে নিয়ে যায়। শিক্ষায়, শিল্পে, সংস্কৃতিতে ও মানবিক উন্নয়নে আলো একটি প্রতীকী শক্তি হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের বহু দরিদ্র অঞ্চল এখনও পর্যাপ্ত আলোবঞ্চিত। সোলার প্রযুক্তি এখন তাদের কাছে আলো পৌঁছে দিচ্ছে, শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ করে দিচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব আলো ব্যবস্থার প্রয়োজনজ্বালানি-নির্ভর আলোর ব্যবহারে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির উপর চাপ বাড়ে, তেমনি পরিবেশদূষণও ঘটে। এই কারণে সারা বিশ্বে LED প্রযুক্তি, সোলার লাইটিং এবং টেকসই আলোর উৎস ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারত সরকারের 'উজালা' প্রকল্প LED আলোকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে শক্তি সাশ্রয়ে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছে।
ভারতের আলোকিত উদাহরণভারত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি গর্বিত নাম। চাঁদ ও সূর্য অভিযানে ISRO-এর অবদান হোক বা গ্রামীণ বিদ্যুৎ সংযোগে সোলার প্রযুক্তির প্রসার—এ দেশের অগ্রগতি সত্যিই প্রশংসনীয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্টার্টআপ—সব জায়গাতেই আলোর বিজ্ঞানের চর্চা এবং প্রয়োগ বাড়ছে।
কীভাবে উদযাপন করা যায়?
বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মশালা ও আলোভিত্তিক প্রদর্শনী আয়োজন
স্কুল-কলেজে আলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা
পরিবেশবান্ধব আলো ব্যবস্থার প্রচার
অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় সোলার লাইট দান
আলোকিত সমাজ মানেই উন্নত সমাজ। আন্তর্জাতিক আলো দিবস শুধু একটি বৈজ্ঞানিক উপলক্ষ নয়, এটি একটি মানবিক বার্তাও বহন করে—জ্ঞান, শিক্ষা ও প্রযুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে। আলোর ব্যবহারে সচেতনতা, বিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আজকের এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আলো শুধু দেখায় না, পথও দেখায়।