Select language to read news in your own language

স্বাস্থ্যসম্মত জীবন সাধারণ মানুষের জন্য নয়

নরেন্দ্রনাথ কুলে 



সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন স্বাস্থ্যসম্মত নিয়ম মেনে চলে না, বিপর্যয়ে যখন তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনাটা মোটেই স্বাভাবিক হতে পারে না । স্বাস্থ্য পরিষেবায় সরকারি পরিকাঠামো অপ্রতুল বলে সরকারিভাবে প্রকল্প চালু করতে হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকারের 'আয়ুষ্মান ভারত' আর রাজ্য সরকারের 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্প । তবু এই প্রকল্পে দরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে যাচ্ছে এটা আশা করা যায় । কিন্তু দরিদ্র মানুষেরা এই পরিষেবা নিতে কতটা সচেতন । সেই সচেতনতার কাজে প্রশাসনের বিজ্ঞাপন শুধু যথেষ্ট নয় । সচেতন হতে যেটুকু শিক্ষা দরকার তা সকলের কাছে এখনো পৌঁছে যায় নি । 2011'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ এখনো শিক্ষার আলো পায়নি ।  
বর্তমানে সাতষট্টি শতাংশ মানুষের কাছে পাঁচ কিমির মধ্যে হাসপাতালের পরিষেবা নেই । তবে প্রতি একান্ন হাজার মানুষের জন্য একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে । তাহলে সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা নিয়ে সন্দেহের কথা উঠতে পারে । এখনো এক চতুর্থাংশ গরিব মানুষের ঊনচল্লিশ শতাংশ বিনা চিকিত্সায় মারা যায় । যা প্রায় তেরো কোটি । সব হিসেব জনগণনার শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী। অতিমারী নিয়ে যে মৃত্যু ঘটছে তার থেকেও এ ত মারাত্মক । এই সূত্র থেকে বলা যেতে পারে যে স্বাস্থ্যসাথী ও আয়ুষ্মান ভারতে সকল সাধারণ মানুষের চলতি ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা থাকতে পারে না । তাহলে দেশে সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামো গড়ে উঠলেই স্বাস্থ্য-কার্ডের সুফল রোগী ও তাঁর পরিবার পেতে পারে । যদিও এই কার্ডে চিকিত্সা বেসরকারিকরণের এক অন্য রূপ । যেখানে চিকিত্সার কথা সহজে বোঝানো যাচ্ছে । কিন্তু তার গভীরে যে সরকারি ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বলে দেওয়া হচ্ছে যা কিন্তু সরকারি ব্যবস্থা নয় ।
দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে যতই পরিসংখ্যান সামনে আসুক, কিন্তু সাধারণ মানুষের করুণ অবস্থার চিত্র অন্য কথা বলে । এই চিত্র আরো করুণ হয়ে উঠছে মানুষের কাছে । দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হয়েছে কিনা মানুষ জানে না, বাজার মূল্যের আগুনে তাঁরা যে জ্বলছে তা নিশ্চিত । অনেকে বলতে পারেন, এই বাজার মূল্যে মানুষ বেঁচে আছে তো । যাঁরা বলবেন তাঁরা আবার সরকার দায়ী নয় বলে বলবেন । কেউ কেউ কেন্দ্র বা রাজ্যের পক্ষ নেবেন । কিন্তু মানুষের পক্ষ কে নেবেন । বেসরকারিকরণের হাতে আজ শুধু রাষ্ট্রীয় সংস্থা বা সম্পত্তি নয় । নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও এখন সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেই । চাল, ডাল, তেল, নুন সবকিছু মজুতদারের পক্ষে সরকারি আইন । মজুতদারের পক্ষে আইন হলে পণ্যের দাম ঠিক করবে তাঁরাই । কিন্তু আজকের বাজারদরে তার প্রতিফলন নয় বলে কি সওয়াল করা যায় ? তাই হয়তো বাজারদরের অগ্নিমূল্য নিয়ে কোনো সরকারের মাথাব্যাথা আছে বলে এখনো সেভাবে চোখে পড়েনি । এটাই স্বাভাবিক বলে যেন এঁরা ধরে নিয়েছে । কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই স্বাভাবিক নয় ।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য সবকিছু বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির শংসাপত্রে সাধারণ মানুষের চেহারা উহ্য থাকলে, সেই বৃদ্ধির জন্য যাঁরা স্বস্তি অনুভব করেন তাঁরা ওই এক শতাংশ মানুষের মধ্যেই পড়েন যাঁদের হাতে দেশের তিয়াত্তর শতাংশ সম্পদ আছে । এই এক শতাংশ মানুষ দেশের বৃদ্ধির গর্বে স্বস্তি ফেলতে পারেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হয় না । 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: