পিয়া রায়
প্রতিবছর ২২ মে দিনটি পালন করা হয় আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস (International Day for Biological Diversity)। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির অপরিসীম বৈচিত্র্য এবং সেই বৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীল আমাদের জীবন ও জীবিকা। জীববৈচিত্র্য কেবল গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ বা মাইক্রোঅর্গানিজম নয়—এটি পৃথিবীর সমস্ত জীবের অস্তিত্ব এবং পারস্পরিক সম্পর্কের এক অনবদ্য ছায়াপথ।
জীববৈচিত্র্যের অর্থ কী?
জীববৈচিত্র্য বলতে বোঝায় পৃথিবীতে থাকা নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবের সংখ্যা, প্রকার ও বৈচিত্র্য। এটি তিনটি প্রধান স্তরে ভাগ করা যায়:
১️⃣ প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species Diversity)
২️⃣ জেনেটিক বৈচিত্র্য (Genetic Diversity)
৩️⃣ ইকো-সিস্টেম বৈচিত্র্য (Ecosystem Diversity)
এই বৈচিত্র্যের কারণেই আমরা খাদ্য, ওষুধ, নির্মাণ সামগ্রী, পরিচ্ছন্ন পানি ও বিশুদ্ধ বায়ু পেয়ে থাকি।
কেন গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য?
জীববৈচিত্র্য আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। উদাহরণস্বরূপ, মৌমাছি ও প্রজাপতিরা পরাগায়নের মাধ্যমে ফসল ফলাতে সাহায্য করে। বনজ ওষুধের অনেক উপাদান আসে গাছপালা থেকে। বিভিন্ন প্রাণীর সহাবস্থানে তৈরি হয় পরিবেশের ভারসাম্য।
কিন্তু, মানুষ নিজের স্বার্থে বন ধ্বংস, অতিরিক্ত চাষাবাদ, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ভারসাম্যকে নষ্ট করছে।
জীববৈচিত্র্যের হুমকি
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ভারতে গন্ডার, বাঘ, বনভূমির পাখি কিংবা নদীর মাছের বৈচিত্র্য এখন বিপন্ন।
আধুনিক কৃষিপদ্ধতি, প্লাস্টিক দূষণ, নদী ও বন উজাড়ের মাধ্যমে আমরা ধ্বংস করছি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে।
কী করতে পারি আমরা?
স্থানীয় প্রজাতিকে রক্ষা করা
বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণে অংশগ্রহণ
রাসায়নিক মুক্ত কৃষিকাজ উৎসাহ দেওয়া
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে শিক্ষাদান
প্লাস্টিক ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি
উপসংহার
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ মানে নিজেকে রক্ষা করা। কারণ প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের উচিত একসাথে সংকল্প নেওয়া—প্রকৃতিকে ভালোবাসার, রক্ষা করার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখার।
প্রকৃতি আমাদের জীবনের মূল চাবিকাঠি—এই উপলব্ধিই হোক এই দিনের প্রতিশ্রুতি।