নরেন্দ্রনাথ কুলে
বাংলা বাধ্যতামূলক। কলকাতা শহরে সমস্ত সাইনবোর্ডে বাংলা বাধ্যতামূলকভাবে প্রথমেই রাখতে হবে । কলকাতা বাংলার রাজধানী । অথচ বাংলা ভাষার সাইনবোর্ড একেবারে সংখ্যালঘু হিসেবে উপস্থিত ছিল । কলকাতা প্রশাসনের উদ্যোগে এখন আর তা থাকবে না । এটি অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য । এর আগে উদ্যোগ থাকলেও তা কার্যকর হয়নি বা কার্যকর করার প্রয়াস সেভাবে হয়নি । এবার প্রশাসন কঠোর মনোভাব নিয়েছে যাতে সমস্ত সাইনবোর্ডের প্রধান ভাষা বাংলা থাকে । সত্যিই বাংলার রাজধানী বাংলা ভাষার প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে নিজেরই অপমান । বাঙালির গর্ব সঙ্কুচিত হয় বৈকি । কলকাতা প্রশাসনের কথায় বাংলা ভাষা শুধু ভাষা নয়, এটি সংস্কৃতির পরিচয়ও বটে । খাঁটি কথা । বাংলা ভাষার এমন মর্যাদাদানে সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে নিয়ে যেতে অবশ্যই পারবো। কিন্তু কলকাতা শহরে বাংলা ভাষাকে আমরা সত্যিই কি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো ? শহরের বাংলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি কি ? শুধু তাই নয় সারা বাংলায় আট হাজারের ওপর বাংলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণায় বাংলা ভাষার মর্যাদা আমরা রাখতে পারছি কি ?
ঠিক এই সময়ে ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষা ও বাঙালি যেভাবে রাজনৈতিক মদতে আক্রান্ত হচ্ছে, সেই আক্রমণ বাংলা ভাষার সাইনবোর্ডে কমে যাবে না । এমনকি কলকাতার বুকে বাংলা ভাষা ও বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছে যাদের হাতে তাদের বাঙালিকে হেয় করা সংস্কৃতি এই সাইনবোর্ডে বিরত থাকবে না । যখন রাজনৈতিক ভাবে বিভাজনের রেখা তৈরি হয় তা একপ্রকার ক্রণিক হয়ে ওঠে । এই রেখা মুছে দিতে যে সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন, আজকের রাজনীতিতে তা দৃষ্টিগোচর নয়। এমনকি মনীষীদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মাল্যদানের শ্রদ্ধার্ঘ ছাড়া তাদের আর কোন চর্চার প্রতিফলন নেই। যদি সত্যিই সংস্কৃতির চর্চা করতে হয় তাহলে নবজাগরণের সকল মনীষীদের জীবন চর্চা আজকে বড় প্রয়োজন । যে চর্চা পারস্পরিক ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি মর্যাদাবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে । যা আজকের দিনে খুবই প্রয়োজন । কলকাতা আজ এক ছোট্ট ভারত যা নানা ভাষা, নানা পরিধান, নানা সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র। সেই মিলনের সুর আজ একটু হলেও ব্যাহত যা রাজনৈতিকভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না । তাই বৈচিত্র্যের মধ্যে কলকাতার ঐক্য বজায় রাখার চর্চা শুধু সাইনবোর্ডের সাথে সম্পর্কিত নয় ।