নরেন্দ্রনাথ কুলে
কলকাতা সংস্কৃতির শহর । নাটক সংস্কৃতির একটি অংশ । কলকাতার নাটক দেশ তথা বিশ্ব খ্যাত । এ সম্পর্কে এখনও কোন দ্বিমত নেই । নাটকের দলগুলো তাদের নাটকে কেউ সমাজের কথা, কেউ মানুষের কথা নানাভাবে বলেই থাকে । তাতে হয়তো সরাসরি রাজনৈতিক কথায় রাজনীতির প্রচার থাকে না, তবে অনেক নাটকের কথায় রাজনৈতিক সৃষ্ট মানুষের যন্ত্রণার কথা প্রতিফলিত হয় । মঞ্চের আলোয় সেই নাটক দর্শকদের মনকে বাস্তব জগতে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে । আবার বাস্তবে ঘটে চলা ঘটনা চাপা দিতে, কিংবা সেই ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে কত না নাটক চলছে । সেই নাটক অবশ্যই রাজনৈতিক । এমন নাটক অবশ্যই শাসক দলের মঞ্চে ঘটতে দেখা যায় । তবে সম্প্রতি কলকাতায় সেই নাটক চলছে । নাটকের জন্য মঞ্চ লাগলেও এ নাটকের বিষয় অবশ্য মঞ্চ । মঞ্চ ভাঙার নাটকে তৃণমূল বনাম বিজেপির, রাজ্য পুলিশ বনাম সেনাবাহিনীর প্রতিযোগিতা কলকাতা তথা বাংলার মানুষ উপভোগ করছে । এ উপভোগ আনন্দের না ভাবনার তা বলা যাচ্ছে না । যদিও নাটক কখনো কখনো দর্শকদের নিছক আনন্দ দেয় । কলকাতার এই নাটক কি নিছক আনন্দের ?
দলীয় রাজনীতির নাটক নিছক আনন্দের হতে পারে না । কোন ঘটনা চাপা দিতে কিংবা ঘটনা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে নাটকের প্রয়োজন হয় । সেই নাটকের অভিনয়ে নেতৃত্ব অনুসারে অনেক সময় এমনভাবে জমে ওঠে যেখানে মানুষের কথাটাই হারিয়ে যায় । মঞ্চ ভাঙা নিয়ে নাটকও তাই । শিক্ষা দুর্নীতির মামলায় অবশেষে অনেক টালবাহানার পর অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা প্রশাসনকে প্রকাশ করতে হল । শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের প্রশাসন অযোগ্যদের আড়াল করতে পারলো না । আর একদিকে বিজেপি প্রশাসন ও তার দলীয় মানুষজনের হাতে বাংলা ও বাঙালির হেনস্থা । এই মঞ্চ ভাঙার নাটক নিয়ে পুলিশ আর সেনাবাহিনীর তৎপরতায় যখন দুই দল এমনভাবে হইচই করেছে যেন দুটি দল বিশুদ্ধ সমাজসেবার কান্ডারী । সেখানে অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা কিংবা বাঙালি হেনস্থার মত ঘটনা কোন বড় ঘটনা নয় । বাঙালি হেনস্থায় তৃণমূলের 'ভাষা আন্দোলন' মঞ্চে আটকে রাখার ব্যবস্থাটাই ভেস্তে গেল । আন্দোলন কোন মঞ্চে সীমাবদ্ধ থাকে না । মঞ্চ ভেঙে দিলে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারতো । অথচ তা না হয়ে মঞ্চ ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে আন্দোলন কোথায় ভেসে গেল ! পুলিশ আর সেনার টানাপোড়েনের নাটক রাজ্য ও কেন্দ্রের কি অদৃশ্য বোঝাপোড়া ? যেখানে অযোগ্য আর হেনস্থা শব্দ দুটি মানুষের চর্চা থেকে সাময়িকভাবে আড়াল হয়ে যায় ।