শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
অভিজ্ঞতা না থাকলে ভাল কিছুই লেখা যায় না। অভিজ্ঞতা লাভের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। অতি ভদ্র শান্ত, শিষ্ট জীবন হবে, আর সমস্ত অভিজ্ঞতা লাভ হবে- তা হয় না। বলেছি ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক- আমাকেও চার পাঁচ বার সন্ন্যাসী হতে হয়েছিল। ভাল ভাল সন্ন্যাসীরা যা করেন সবই করেছি। বিশ বছর এইটাতেই গেল। ঐ সময় খান কতক বই লিখে ফেললুম। ' দেবদাস ' প্রভৃতি ঐ আঠার - কুড়ির মধ্যে লেখা। তারপর গান বাজনা শিখতে লাগলুম। পাঁচ বছর ঐতে গেল। তারপর পেটের দায়ে চলে গেলাম নানা দিকে। প্রচণ্ড অভিজ্ঞতা তাই থেকে। এমন অনেক কিছুই করতে হতো যাকে ঠিক ভাল বলা যায় না। তবে সুকৃতি ছিল, ওর মধ্যে একেবারে ডুবে পড়িনি। দেখতে থাকতাম, সমস্ত খুঁটিনাটি খুঁজে বেড়াতাম। অভিজ্ঞতা জমা হতো। সমস্ত island গুলা ( বার্মা, জাভা, বোর্নীয়ো) ঘুরে বেড়াতাম। সেখানকার লোক অধিকাংশই ভাল নয় - smugglers. এই সব অভিজ্ঞতার ফল ' পথের দাবী ' । বাড়ীতে বসে, আর্ম চেয়ারে বসে সাহিত্য সৃষ্টি হয় না, অনুকরণ করা যেতে পারে। কিন্তু, সত্যিকার মানুষ না দেখলে সাহিত্য সৃষ্টি হয় না । মানুষ কি, তা মানুষ না দেখলে বোঝা যায় না। অতি কুৎসিত নোংরামির ভিতরও এত মনুষ্যত্ব দেখেছি যা কল্পনা করা যায় না।
তথ্যসূত্রঃ কুমুদ কুমার ভট্টাচার্য : শরৎচন্দ্র ও বাংলার কৃষক, (ডিসেম্বর, ১৯৫৭), কলকাতা, পৃষ্ঠা: ৮০-৮১
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা : রাজীব সিকদার

