নরেন্দ্রনাথ কুলে
বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে নেপাল । আন্দোলনকারীর মৃত্যু দিয়ে আন্দোলন ঠেকাতে পারেনি নেপাল প্রশাসন । বিদ্রোহের আগুনে সংসদ ভবন থেকে মন্ত্রীদের বাড়ি জ্বলছে। প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের ইস্তফা আন্দোলনকে প্রশমিত করতে পারেনি । বিদ্রোহের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলতে জ্বলতে হঠাৎই সেই আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে । রাজতন্ত্র অবসানের পর যে গণতন্ত্র এসেছে তাতে মানুষের জীবনের প্রয়োজনটুকু দিতে পারেনি, অথচ তা কেড়ে নিতে পেরেছে । দুর্নীতি আর বেকারত্বের আগুনে কেড়ে নিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন । প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে নেপালের যুব জনতা । মন্ত্রীরা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাঁচছে। এমনকি বিরোধী নেতা মন্ত্রীর বাড়িও আক্রান্ত। আন্দোলনকারীদের বয়স তিরিশের নীচে । অধিকাংশ পড়ুয়া । জেন-জেড নামে খ্যাত হয়েছে এই আন্দোলন। এই সময়ে এই জেনারেশনের মোবাইল আসক্ত তাঁদের সমাজ -বিমুখ করে তুলছে বলে দেশে দেশে বিশিষ্ট মহলে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যে চিন্তার ভাঁজ দৃশ্যমান ছিল, এই আন্দোলন সেই দৃশ্যপট বদলে দিতে পেরেছে । সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করার প্রতিবাদে বিদ্রোহের আগুন আরো তীব্র হয়েছে বলে যে খবর তা ও চালু করার পরেও আগুন প্রশমিত হয়নি । এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানুষকে সামাজিক মাধ্যমে আটকে রাখতে পারেনি । সামাজিক মাধ্যমের মাদকতায় যুব সমাজ একেবারে ডুবে থাকেনি । এই আন্দোলন তা প্রমাণ করেছে । গতবছর বাংলাদেশের যুবসমাজের আন্দোলন আর আজকে নেপালের তরুণদের আন্দোলন বলে দিয়েছে দেশের চলমান রাজনৈতিক ক্ষমতা দুর্নীতির পরিপূরক হয়ে উঠেছে । এই চলমান রাজনীতি তরুণদের দিশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে । তরুণদের আন্দোলন অরাজনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক যাই হোক না কেন তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে শুধু রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি, তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার দুরাচারের বিরুদ্ধে আগুন জ্বালাতে পেরেছে । আজকের বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক পথচলায় মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে । নিষ্পেষিত মানুষ দেশে দেশে প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে । শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ আর এখন নেপালে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি মানুষের প্রতিবাদ বলে দিয়েছে চলমান রাজনীতির প্রতি তাদের ঘৃণা কতটা তীব্র । এই প্রতিবাদ ও আন্দোলনের চেহারায় সঠিক রাজনীতির প্রয়োজন । নইলে এই আন্দোলনও মানুষের জীবনকে নিশ্চয়তা দেবে না ।
বিশ্বব্যাপী চলমান গণতন্ত্রে, এমনকি তথাকথিত সমাজতন্ত্রে মানুষের জীবন সংকট বেড়েছে বই কমেনি । বরং নেতৃত্ব ও প্রশাসনের দুর্নীতি কিংবা স্বৈরাচারীর চেহারা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে । মানুষ এর থেকে মুক্তি চাইছে । সেই মুক্তি শুধু ভোট বা সরকার পরিবর্তনে আসতে পারে না । এই কথাটা প্রতিবাদী মানুষদের অরাজনৈতিকভাবে বোঝা সম্ভব নয় । সঠিক রাজনৈতিক চেতনা গড়ে না উঠলে কোন প্রতিবাদ বা আন্দোলনে তার সাময়িক জয় হতে পারে মাত্র । এ শুধু আজ আর বাংলাদেশ এবং নেপাল দেশের সমস্যা নয় ।

