নরেন্দ্রনাথ কুলে
মোদিজি এখন একজন রেকর্ডধারী প্রধানমন্ত্রী । ভাষণে ও বিদেশ সফরে এই মূহুর্তে তিনিই প্রথম । ৭৯তম বর্ষ স্বাধীনতা দিবসে তিনি ১০৩ মিনিট ভাষণ দিয়ে প্রাক্তন সকল প্রধানমন্ত্রীর থেকে এ বিষয়ে এগিয়ে গেলেন । আবার তিনিই এখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি সবথেকে বেশি বিদেশ সফর করেছেন । এ বছর জুলাই মাস পর্যন্ত তিনি ৯১ বার বিদেশ সফর করেছেন। সেই সফরের গুনাগুন বিচারে তাঁর পারিষদদের প্রচারের আলোয় তিনি বিশ্বগুরু হয়েছেন ।
তিনিই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি তাঁর মনের কথা একের পর এক প্রচার করে দেশবাসীকে শুনিয়েছেন । দেশবাসীর মনের কথা জানার চেষ্টা করেছেন, তেমন কোন নিদর্শন তিনি তৈরি করতে পারেন নি । বরং ঘটনা সাপেক্ষে মৌনব্রত পালন করেছেন । দিল্লির দাঙ্গায়, মণিপুর দাঙ্গায় যখন আগুন জ্বলছে তিনি তাঁর মৌনব্রত রক্ষা করেছেন । হাথরাস কান্ডে সারা দেশবাসী যখন ব্যথিত, তখন তিনি নির্বাক ছিলেন । বিরোধীদের খোঁচা খেয়েও তিনি তাঁর মৌনব্রত রক্ষা করে গেছেন । তিনি একজন যোগী পুরুষ । নির্জন স্থানে তার নিদর্শন তিনি রেখেছেন এবং দেশবাসীকে দেখিয়েছেন । আবার তিনি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি ভগবানের অংশ বলে নিজেকে দাবি করেছেন । এ সবকিছুর রেকর্ড প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একমাত্র তাঁরই ।
তিনি দীর্ঘ ভাষণ যেমন দিতে পারেন তেমন মৌনব্রত পালন করতে পারেন । এই রেকর্ড এই মূহুর্তে তুলনাহীন । ভাষণের রেকর্ডধারী হলেও সব ভাষণের মান তিনি রাখতে পেরেছেন এমন নয় । বছরে দু'কোটি কর্মসংস্থান আর প্রতি দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা তিনি রাখতে পারেন নি । তবে নোটবন্দী করে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছিলেন । এটাও একটা তাঁর রেকর্ড ।
সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি মালিকানার হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তিনি সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন । এমনকি সামরিক বাহিনীর অগ্নিবীর সৈনিক চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ করার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে তিনি দেশরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড করেছেন । বেকারত্বের পরিসংখ্যানেও তাঁর রেকর্ড এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ বিষয়ে 'ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট-২০২৪' বলে দিয়েছে । তদানীন্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা এই রিপোর্ট ফাঁস করে দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক অনুষ্ঠানে । সেই রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে বেকারদের মধ্যে তিরাশি শতাংশই যুবক-যুবতী । শুধু তাই নয় বেকারত্ব কমানোর দাওয়াই নাকি সরকারের হাতে নেই বলেও তাঁর মত ব্যক্ত করেছেন । যুবক-যুবতীর এই অবস্থার পাশাপাশি আর একটি পরিসংখ্যান আরো ভয়াবহ । তা হল বিশ্ব ক্ষুধা সূচক তালিকায় ভারতের স্থান ক্রমশ নিম্নমুখী যা ১২৫ টি দেশের মধ্যে ১১১ তম । এমনকি কৃষকদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক । সম্পত্তির নিরিখে আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্যের পার্থক্য ক্রমশ বর্ধমান । তাঁর আমলের এ এক অসাধারণ রেকর্ড। তাঁর হিন্দুত্ব এজেন্ডার ফলে দিল্লির দাঙ্গায় ৩৬ জন মুসলমান ও ১৬ জন হিন্দু নাগরিকের প্রাণ যায় । এই হিন্দুত্ব এজেন্ডার বাস্তবায়নের পথে এটাও তাঁর এক রেকর্ড।
আর একটি পরিসংখ্যানেও তিনি রেকর্ড করে চলেছেন । তাঁর আমলে সারা দেশে একাত্তর হাজার স্কুল বন্ধ হয়েছে, কিন্তু মন্দির বেড়েছে প্রায় দু লক্ষের বেশি । অবশ্য শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন ধারা প্রবর্তনে তিনি রেকর্ড না করে পারেন না । ধর্ম আর বিজ্ঞানের মিশ্রণে শিক্ষা বিস্তারে তাঁর নেতৃত্ব অবশ্যই রেকর্ড করে চলেছে । Cow সায়েন্স নামে এক নতুন সায়েন্স প্রবর্তন করেছেন । এ এক অনন্য রেকর্ড।
তাঁর 'মন কি বাত'-এ এই সমস্ত রেকর্ডের অহঙ্কার তিনি করেন না । রেকর্ডধারী মানুষজন অবশ্য অহঙ্কারহীন হন । তিনিও হয়তো তাই । তবে সেই অহঙ্কারহীন অবস্থান থেকে আরো কি কি রেকর্ড গড়তে বা ভাঙতে পারেন তা তাঁর মনে থাকলেও এবার 'বাত'-এ করেছেন।