যোগমায়া আচার্য
আজ International Overdose Awareness Day। এই দিনটি বিশ্বকে এক ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে দাঁড় করায়—ওভারডোজ। মাদকদ্রব্য, প্রেসক্রিপশন ড্রাগ কিংবা অ্যালকোহলের অতিরিক্ত সেবন প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রাণ কেড়ে নেয়। ভয়াবহ বিষয় হলো, এই মৃত্যুগুলির অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য, যদি সমাজে সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
ভারতে মাদকাসক্তির সমস্যা নতুন নয়। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, বিগত কয়েক বছরে মাদক-সম্পর্কিত মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ওষুধের ভুল ব্যবহার, অবৈধ ড্রাগ এবং সস্তা নেশাজাতীয় দ্রব্যের সহজলভ্যতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক বা সেডেটিভ ব্যবহারও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। শুধু যে নেশা নয়, অজান্তেই ওষুধের অতিরিক্ত সেবনও জীবন কেড়ে নিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে International Overdose Awareness Day শুধু শোক প্রকাশের দিন নয়, এটি প্রতিরোধের এক বৈশ্বিক বার্তা। ওভারডোজে মৃতদের স্মরণ করার পাশাপাশি এ দিন আমাদের আহ্বান জানায়—নেশা ও অতিরিক্ত সেবনের বিপদ সম্পর্কে পরিবার, সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে।
ওভারডোজ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম দরকার খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা। নেশা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলি নিয়ে এখনো সমাজে প্রচুর ট্যাবু বিদ্যমান। ফলে অনেকেই সাহায্য চাইতে সংকোচ বোধ করেন। অথচ সঠিক সময়ে কাউন্সেলিং, চিকিৎসা এবং পরিবার-সমাজের সহযোগিতা অনেক জীবন বাঁচাতে পারে। একই সঙ্গে naloxone-এর মতো জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সম্পর্কে সচেতনতা এবং এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।
ভারত সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলি মাদকবিরোধী প্রচার চালালেও স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। স্কুল-কলেজে সচেতনতা ক্যাম্পেইন, চিকিৎসকদের দায়িত্বশীল প্রেসক্রিপশন, এবং মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা ওভারডোজ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
আজকের দিনে বার্তা একটাই—ওভারডোজ কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রতিরোধযোগ্য বিপদ। প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি সমাজ ও প্রতিটি রাষ্ট্রকে এই লড়াইয়ে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। একজন মানুষকে বাঁচানো মানে শুধু একটি জীবন নয়, একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন এবং একটি ভবিষ্যৎকে বাঁচানো।