"শরৎচন্দ্র রাজনীতিতে মাস লিডার ছিলেন না। অথচ Mass এর সাথে ব্যক্তিগতভাবে তিনি এমন মিশতে পারতেন যে সে রকম বোধ হয় বাংলাদেশের কোনো ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিই পারতেন না। তাঁর সমগ্র সাহিত্যেও তার ভুরি ভুরি নিদর্শন ও প্রমাণ বিস্তৃত ভাবে ছড়ানো আছে। কিন্তু, তিনি সমবেত জনতার সম্মুখে এসে দাঁড়াতে পারতেন না, জনসভায় তিনি বক্তৃতা করতে পারতেন না। কি এক রকম ভয়ে যেন আড়ষ্ট হয়ে যেতেন। সেই কারণে জনসভা তিনি এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু, যাঁরা মাস লিডার তিনি তাঁদের লিডার ছিলেন। তিনি তাঁদের বুদ্ধি দিতেন, পরামর্শ দিতেন, গাইড করতেন। কিরণ শঙ্কর রায়ের মতো কুশাগ্র বুদ্ধিমান ব্যক্তিও তাঁর উপদেশ গ্রহণ করতেন আবার সুভাষ চন্দ্র বোসের মতো জননেতাও তাঁর উপদেশ গ্রহণ করতেন। উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো চিন্তাশীল ব্যক্তিও তাঁর মনীষার প্রসাদ গ্রহণ করতেন। কত বড়ো স্বদেশ প্রেমিক যে তিনি ছিলেন, যাঁরা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশবার সৌভাগ্যলাভ করেছেন তাঁরাই তা উপলব্ধি করবার সুযোগ পেয়েছেন। পলিটিক্যাল কর্মক্ষেত্রে নিঃস্বার্থপরায়ণতায় শরৎচন্দ্র ছিলেন অদ্বিতীয়। যাঁরাই পলিটিক্স করেন তাঁরা সকলেই পলিটিক্স থেকে কিছু না কিছু কোনো ভাবে আহরণ করেনই। কেহ স্বার্থ, কেহ নাম যশ, কেহ ক্ষমতা কিছু না কিছু প্রত্যেকেই কোনো ভাবে গ্রহন করবার চেষ্টা করেন, কিন্তু শরৎচন্দ্র কিছুই নেননি। পলিটিক্সে তিনি শুধু দিতেই এসেছিলেন, কনামাত্র গ্রহণ করেননি।"
তথ্যসূত্রঃ শচীনন্দন চট্টোপাধ্যায় (আষাঢ় ১৩৬১ / ইংরেজি ১৯৫৪), শরৎচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবন, কলকাতা - ১২, পৃষ্ঠা: ১০৬-১০৮।
তথ্যসংগ্রহ ও সম্পাদনা: রাজীব সিকদার, কলকাতা