যোগমায়া আচার্য
প্রতিবছর ২৮ জুলাই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় “World Nature Conservation Day”। এই বিশেষ দিনটি শুধু একটি দিবস নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা, একটি দায়িত্বের স্মারক যা মানুষকে মনে করিয়ে দেয়—এই পৃথিবী, এই প্রকৃতি আমাদের একমাত্র বাসস্থান এবং তাকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক ও নাগরিক কর্তব্য। দ্রুত নগরায়ন, বনভূমি উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, ও প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার আজ পৃথিবীর অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে দাঁড় করিয়েছে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ শুধুমাত্র কোনও এনজিও বা সরকারি প্রকল্পের বিষয় নয়, বরং প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। বনাঞ্চল ধ্বংস, বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি, জলবায়ু সংকট—সবকিছুই একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রকৃতি আমাদের যা কিছু দিয়েছে—বিশুদ্ধ বাতাস, পানীয় জল, খাদ্য, বাসস্থান—তাকে যদি আমরা অবজ্ঞা করি, তবে একদিন আমাদের অস্তিত্বকেই সংকটে পড়তে হবে।
বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা, যাতে সবাই বুঝতে পারে—প্রকৃতি ধ্বংস মানেই নিজেদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস। যে প্রজন্ম আজ জন্ম নিচ্ছে, তারা যেন সবুজ পৃথিবী পায়, তারা যেন পাহাড়, নদী, বন, জীববৈচিত্র্য ও নির্মল বাতাস উপভোগ করতে পারে—এই দায় আমাদেরই। আমরা যদি এখনই না জাগি, তাহলে আগামী প্রজন্মকে আমরা একটি ধ্বংসপ্রায় গ্রহই দিয়ে যাব।
ছোট ছোট কাজ দিয়েই প্রকৃতি সংরক্ষণের পথে আমরা এগোতে পারি। যেমন—প্লাস্টিক বর্জন, জল অপচয় রোধ, গাছ লাগানো, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, জৈবসার ব্যবহার, পশুপাখির সুরক্ষা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের ব্যবহার। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়াও জরুরি। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন—সবারই সম্মিলিত উদ্যোগেই প্রকৃতি বাঁচানো সম্ভব।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, রহস্য ও মহিমা আমাদের সভ্যতাকে আলোকিত করেছে। কিন্তু যদি আমরা অবহেলা করি, তবে সেই প্রকৃতি একদিন প্রতিশোধ নেবে—প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য সংকট, পানি সংকট, উষ্ণতা বৃদ্ধি, প্রাণী-বৈচিত্র্যের হারিয়ে যাওয়া, রোগব্যাধির বিস্তার—সবই তার ফল। প্রকৃতি একদিকে আশীর্বাদ, অপরদিকে চরম প্রতিশোধপরায়ণ। তাই এখনই সময়, মানুষ যেন সচেতন হয় এবং নিজের জীবনযাত্রায় পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা আনে।
বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়; এটি প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের মিলিত বসতভূমি। আসুন, আজকের দিনটিকে প্রতিজ্ঞার দিন করে তুলি—প্রতিদিন একটু একটু করে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এই গ্রহের প্রতি ভালোবাসাই হোক আমাদের সত্যিকারের আধুনিকতা। আমাদের কাজই বলে দেবে, আমরা প্রকৃতিকে সত্যিই ভালোবাসি কিনা।