পিয়া রায়
অর্থ কেবল লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং স্বাধীনতার এক পরিপূর্ণ রূপ। যে মানুষটি নিজে উপার্জন করতে পারেন, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে জানেন—তাঁর জীবনে থাকে এক গভীর আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও সম্মান। এই চেতনা ও চর্চাকেই উদযাপন করতে প্রতি বছর পালিত হয় National Financial Freedom Day—একটি দিন, যা আমাদের শেখায় আর্থিক স্বাবলম্বিতা মানেই জীবনের সত্যিকারের মুক্তি।
আর্থিক স্বাধীনতা মানে শুধু অনেক টাকা থাকা নয়, বরং এমন একটি অবস্থায় পৌঁছানো যেখানে প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হতে না হয়। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন—চাকরি, ব্যবসা, অবসর কিংবা স্বপ্ন পূরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।
আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম ধাপ হলো সঠিক অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা। উপার্জনের পাশাপাশি ব্যয়ের হিসেব রাখা, বাজেট তৈরি করা, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো—এসবই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। দ্বিতীয় ধাপ হলো সঞ্চয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলা। প্রতিদিনের উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় রাখা মানে শুধু টাকাই জমানো নয়, বরং একধরনের মানসিক নিরাপত্তা তৈরি করা।
আধুনিক যুগে বিনিয়োগ, ইনসুরেন্স, পেনশন স্কিম, মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক মার্কেট—এসব আর শুধু অর্থনীতিবিদদের বিষয় নয়, সাধারণ নাগরিকেরও জানা উচিত নিজের আর্থিক ভবিষ্যতের পথ। কারণ টাকা না থাকলে শুধু স্বপ্ন নয়, দায়িত্বও অনিশ্চয়তায় ভেঙে পড়ে। তাই স্কুলজীবন থেকেই অর্থ সচেতনতা ও ফাইনান্স শিক্ষার প্রয়োজন আছে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রস্তুত হয় আত্মনির্ভর হওয়ার পথে।
বিশেষ করে নারীদের জন্য আর্থিক স্বাধীনতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এখনও বহু নারী উপার্জনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সিদ্ধান্তে স্বাধীন নন। National Financial Freedom Day নারীদের নিজের উপার্জন ও বিনিয়োগে সচেতন করে তোলে—এবং বুঝিয়ে দেয়, সম্মান পেতে হলে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থানও শক্ত হতে হবে।
এই দিবসটি সেই সব মানুষদের জন্যও এক প্রেরণা, যারা ঋণে জর্জরিত, কিংবা জীবনের আর্থিক গোলকধাঁধায় দিশেহারা। অর্থনৈতিক পরামর্শ, সচেতনতা ও ধৈর্য দিয়েই সেই দুঃসময়কে জয় করা সম্ভব।
অর্থের স্বাধীনতা মানে জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখা। এই নিয়ন্ত্রণ এনে দেয় আত্মবিশ্বাস, সম্মান, স্বপ্ন পূরণের শক্তি। National Financial Freedom Day যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অর্থ কেবল প্রয়োজন নয়, এটি নিজস্বতা গঠনের এক অপরিহার্য অংশ। আর একমাত্র সচেতন চর্চাই পারে আমাদের পৌঁছে দিতে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বনির্ভরতার দিগন্তে।


