Select language to read news in your own language


Like SatSakal Facebook Page to stay updated.

নাগপঞ্চমী: আধ্যাত্মিকতা ও পরিবেশ চেতনার উৎসব


পিয়া রায়

 

নাগপঞ্চমী, হিন্দু ধর্মে এক গভীর আধ্যাত্মিকতা ও লোকবিশ্বাসে পরিপূর্ণ একটি তিথি, যা শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চম দিনে পালিত হয়। এই দিনে সনাতনী সংস্কৃতিতে সাপ বা নাগদেবতার পূজার মাধ্যমে মানুষের শ্রদ্ধা, ভয় এবং প্রকৃতির প্রতি সহাবস্থানের বার্তা উঠে আসে। হিন্দু পুরাণ, লোককথা ও গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এই উৎসব নানা আচার, উপবাস, কাহিনি ও ধর্মীয় বিশ্বাসে সমৃদ্ধ।

নাগপঞ্চমীর মূল আকর্ষণ নাগদেবতার পূজা। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নাগরা শুধু পৃথিবীর নীচের অংশ ‘পাতাল’-এর বাসিন্দা নয়, তারা ঋষি-মুনি, দেবতা এবং মানুষের রক্ষাকর্তাও বটে। বাসুকি, অনন্ত, পদ্ম, কার্কোটক, তক্ষক প্রমুখ নাগদেবতারা ভগবান শিব, বিষ্ণু ও কৃষ্ণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। পুরাণ অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় বাসুকি নাগনাথ দেবতা হিসেবে মন্থনদণ্ডরূপে ব্যবহৃত হন। ভগবান বিষ্ণু শয়ন করেন শেষনাগের উপর, আবার কৃষ্ণ তাঁর শৈশবে কালীয় নাগকে পরাজিত করে নদী থেকে উৎখাত করেন। তাই, নাগপঞ্চমী শুধু পূজা নয়—একটি সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক চেতনার প্রতিফলন।

এই দিনে গ্রামে-গঞ্জে নারী-পুরুষেরা উপবাস পালন করেন এবং দুধ, ফুল, হলুদ, দূর্বা ঘাস ও প্রসাদ দিয়ে সাপের মূর্তি কিংবা জীবিত সাপকে পূজা করেন। মাটি দিয়ে সাপের প্রতিমা তৈরি করে পূজার রীতি এখনও বহুস্থানে প্রচলিত। স্নান করে বিশুদ্ধভাবে পূজায় বসে মন থেকে প্রার্থনা করা হয়—নাগদেবতা যেন পরিবার, শস্য, গৃহপালিত প্রাণী এবং সন্তানদের সুরক্ষা প্রদান করেন। এই দিন সাপকে হত্যা করা পাপ বলে গণ্য হয়। এমনকি অনেকে এই সময় কৃষিকাজ বন্ধ রাখেন যাতে মাটির তলার সাপ বা সরীসৃপের ক্ষতি না হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে, যখন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে, তখন নাগপঞ্চমী নতুন তাৎপর্য অর্জন করছে। উৎসবটি মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার সেতুবন্ধনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, একটী সহানুভূতির আহ্বানও বটে—যেখানে ভয় নয়, বরং সহমর্মিতা দিয়ে প্রাকৃতিক প্রাণীগুলির প্রতি আচরণ করা উচিত। সাপ পরিবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। তারা ইঁদুরসহ নানা ক্ষতিকর প্রাণী নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা কৃষিক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করে।

তবে এক্ষেত্রে একটি দুঃখজনক বাস্তবতাও আছে। অনেক স্থানেই সাপকে পূজার জন্য ধরে এনে তাদের মুখ সেলাই করে রাখা হয়, খোলা জায়গায় দীর্ঘক্ষণ না খাইয়ে রাখা হয়, এমনকি হিংস্রভাবে ব্যবহার করা হয়, যা একটি নিষ্ঠুরতা। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত ধর্মীয় আচারের মধ্যে করুণা ও ন্যায্যতা বজায় রাখা। জীবজন্তুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করাই প্রকৃত পূজা।

নাগপঞ্চমী তাই কেবল কোনও প্রাচীন পরম্পরা নয়; এটি এক প্রাকৃতিক চেতনা ও ধর্মীয় সৌহার্দ্যের উৎসব। এই তিথি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণী—তাদের বিপজ্জনকতা সত্ত্বেও—ভাগ্য, আধ্যাত্মিকতা ও পরিবেশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। নাগদেবতার বন্দনায় যেন প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয় ভক্তি, সহনশীলতা ও প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ববোধ। এই ভাবনাই হোক আমাদের আজকের অঙ্গীকার।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon