নরেন্দ্রনাথ কুলে
আচ্ছে দিন । সব কা সাথ সব কা বিকাশ । সব কা সাথ সব কা বিকাশ সব কা বিশ্বাস । কথাগুলো মানুষ ভুলে গেছে এ কথা বলা যায় না । যদি মানুষ ভুলেও যায়, তাহলে কেন ভুলে গেল ? তার মানে মানুষের কাছে এখন 'আচ্ছে দিন' হাজির হয়েছে যেখানে সবার বিকাশ ঘটে গেছে যা সবার বিশ্বাস অর্জন করেছে । তাই কি মানুষ ভুলে গেছে ? নাকি এ চর্চার আজ আর প্রাসঙ্গিকতা নেই । তবু খবর অনুযায়ী দেখা যেতে পারে কার 'আচ্ছে দিন' কার 'বিকাশ', কার 'বিশ্বাস' আর কার কিছুই নেই।
আচ্ছে দিন । সব কা সাথ সব কা বিকাশ । সব কা সাথ সব কা বিকাশ সব কা বিশ্বাস । কথাগুলো মানুষ ভুলে গেছে এ কথা বলা যায় না । যদি মানুষ ভুলেও যায়, তাহলে কেন ভুলে গেল ? তার মানে মানুষের কাছে এখন 'আচ্ছে দিন' হাজির হয়েছে যেখানে সবার বিকাশ ঘটে গেছে যা সবার বিশ্বাস অর্জন করেছে । তাই কি মানুষ ভুলে গেছে ? নাকি এ চর্চার আজ আর প্রাসঙ্গিকতা নেই । তবু খবর অনুযায়ী দেখা যেতে পারে কার 'আচ্ছে দিন' কার 'বিকাশ', কার 'বিশ্বাস' আর কার কিছুই নেই।
কৃষিপ্রধান দেশ এই ভারতবর্ষ। এখানে কৃষকদের কাছেই তো আচ্ছে দিন থাকার কথা । কিন্তু এই কৃষকগণ কেমন আছেন ? জাতীয় ক্রাইম ব্যুরো পরিসংখ্যান বলছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় দেশে দুই জন চাষী আত্মহত্যা করেছে । আবার ২০২২ পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে প্রতি ঘন্টায় একজন করে চাষী আত্মহত্যা করেছে । তাহলে ২০২২ সাল পরবর্তী সময়ে কি চাষীর আত্মহত্যার সংখ্যার পরিসংখ্যান চাষীর আচ্ছে দিন পূর্ণ হয়েছে বলে কি রাজনৈতিক গর্ব প্রকাশিত হয়েছে ? যদিও কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের কথা বলে কৃষকদের যথার্থ সম্মানে রাজনৈতিক গর্ব থাকতে পারে । কিন্তু কৃষকরা কি সত্যিই সম্মানিত ? তাঁদের জীবন সত্যিই কি উন্নত হয়েছে ? তাঁদের আয় দ্বিগুন হয়েছে বলে যে প্রচার হয়েছে সত্যিই কি তা হয়েছে ? বিশেষত ডাবল ইঞ্জিন সরকার চলছে যে সব রাজ্যে সেখানে কৃষকের আয় দ্বিগুন বেড়ে তাঁদের জীবন কি উন্নত হয়েছে ? কৃষকদের ন্যায্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবি তো সরকার মানেনি । সম্প্রতি ডাবল ইঞ্জিন সরকার পরিচালিত রাজ্য মহারাষ্ট্রে গত তিন মাসে প্রায় ৭৭০জন কৃষক আত্মহত্যা করেছে বলে খবর প্রকাশিত । এই পরিসংখ্যান বলছে গত তিন মাসে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে আট জন কৃষক আত্মহত্যা করেছে । শাসক রাজনীতি গর্ব করে বলতে পারে প্রতি ঘন্টায় একজন কৃষকের আত্মহত্যার হার কমেছে l পরিসংখ্যান বলছে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের কোন রাজ্যই কৃষকদের জন্য সহমর্মী নয় । তবু কৃষকের জন্য গর্বিত হলেও কৃষকদের আয় দ্বিগুন হয়নি, কৃষকের আত্মহত্যা রুখে দেওয়া সম্ভব-যে হয়নি তা প্রমাণিত । ডাবল ইঞ্জিন সরকার যদি ব্যর্থ হয়, একটি ইঞ্জিনের ব্যর্থতা অঙ্কের হিসাবে বলা গেলেও রাজনৈতিক তর্ক যুদ্ধ জেতার প্রবণতা লক্ষণীয় । আসলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর রিপোর্ট সব রাজ্য সহজভাবে সৎভাবে দেবেই তার নিশ্চয়তা নেই। সে করোনা হোক, ডেঙ্গু হোক, অক্সিজেনের অভাব হোক আর ধর্ষণ খুন হোক আবার কৃষকের আত্মহত্যা হোক। মানুষের কাছে সবকিছু পরিষ্কার হলেও চলতি রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় সব গুলিয়ে দিতে চায় ।
শুধু কৃষকদের অবস্থা খারাপ তা কিন্তু নয় । দেশে শ্রমিকদের অবস্থাও কি ভালো ? সংগঠিত শ্রমিক কিংবা অসংগঠিত শ্রমিক যাই বলি না কেন, আজকের শ্রমিক মানেই তো ঠিকা শ্রমিক । এই ঠিকা শ্রমিক তাদের লড়াই শুধু টিকে থাকা । নতুন শ্রম আইন হলে শ্রমিকের দাবি করার অধিকারটাই চলে যাবে । ঠিকা দিয়েই তো দেশকে ঠেকা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা চলছে । শ্রমিক শুধু ঠিকায় কাজ করছে না । ঠিকা শিক্ষক, ঠিকা সৈনিক, ঠিকা পুলিশ, এমনকি সমস্ত অফিসকাছারিও আজ ঠিকা কর্মীতে চলছে । দেশের শ্রমিক, সৈনিক, পুলিশ, অফিসকর্মী ঠিকায় কাজ করবে, কৃষক আত্মহত্যা করবে। আর সুবিধা নেবে একটা শ্রেণী । এক সমীক্ষা বলছে দেশের শীর্ষে থাকা এক শতাংশ মানুষের হাতে দেশের মোট সম্পদের চল্লিশ শতাংশের বেশি সম্পদ রয়েছে । এই শ্রেণীর মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রীও আছেন । সাম্প্রতিক সংবাদ অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক বলছে প্রতি চার জন ভারতীয়র মধ্যে একজন দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন । আর্থিক বৈষম্যের ভয়াবহ এই চেহারায় তাহলে কাদের আচ্ছে দিন, কাদের বিকাশ ?