পিয়া রায়
মানুষের জীবনে ভুল, বিরোধ, আঘাত, তিক্ততা—এসব যেন নিত্যসঙ্গী। কখনও আমরা আঘাত করি, কখনও আমরা আহত হই। কিন্তু এই ভাঙাচোরা সম্পর্কের আবর্ত থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হলো ক্ষমা। আর সেই ক্ষমার শক্তি ও প্রয়োজনীয়তাকে সম্মান জানাতেই প্রতি বছর ৭ জুলাই পালিত হয় Global Forgiveness Day—একটি দিন যা আমাদের হৃদয়ের দুঃখ, অভিমান ও রাগের ভার নামিয়ে রাখার কথা বলে।
ক্ষমা মানে দুর্বলতা নয়, বরং এটি হল সবচেয়ে বড় শক্তি। যে মানুষ সত্যিকারের ক্ষমা করতে পারে, সে মুক্ত হয় নেতিবাচকতা থেকে, ক্ষোভ থেকে এবং মানসিক বোঝা থেকে। কারণ ক্ষমা দেওয়া মানে শুধু অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া নয়, বরং নিজেকেও মুক্ত করা—অশান্তি ও বিষাক্ত আবেগের শিকল ভেঙে।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি মানুষই ভুল করে। ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়—ভুল হলে ‘সরি’ বলতে হয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেই সরলতা হারিয়ে ফেলি। অহংকার, অভিমান, ইগো আমাদের মনকে এতটাই আবদ্ধ করে দেয় যে, আমরা ভুলে যাই—ক্ষমা করাই জীবনের সবচেয়ে বড় মুক্তি।
ক্ষমার গুরুত্ব কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজ, দেশ, ধর্ম, জাতি—সব ক্ষেত্রেই ক্ষমা হতে পারে শান্তির মূল চাবিকাঠি। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বহু দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের অবসান ঘটেছে ক্ষমার মাধ্যমে। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতাবাদীরা—গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং—ক্ষমাকেই জীবনের মূল দর্শন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
মানব জীবনে একা থাকা সম্ভব নয়। আর যেখানে সম্পর্ক, সেখানেই মতপার্থক্য, ভুল বোঝাবুঝি, আঘাত থাকবেই। কিন্তু সেই আঘাতকে বয়ে বেড়ানো মানে কাঁটার মুকুট মাথায় নিয়ে পথচলা। জীবনের ভার লাঘব করতে হলে, মনকে হালকা করতে হলে, ক্ষমার কোনো বিকল্প নেই।
Global Forgiveness Day সেই উপলক্ষ তৈরি করে, যখন আমরা থেমে গিয়ে ভাবতে পারি—আমি কি কাউকে কষ্ট দিয়েছি? আমি কি কারও প্রতি অকারণে রাগ পুষে রেখেছি? হয়তো সেই মানুষটিও অপেক্ষা করছে, একটি সরল ‘ক্ষমা করো’ শুনবে বলে। আবার হয়তো আমরাও কারও কাছ থেকে সেই শব্দটির আশায় রয়েছি।
ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে যেমন সম্পর্ক জোড়া লাগে, তেমনই নিজের আত্মিক উন্নয়নও ঘটে। এতে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে, জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। আমাদের মধ্যে যে মানবিকতা, ভালোবাসা ও সহানুভূতি রয়েছে, তা আরও গভীর হয়।
এই দিনটিকে শুধুমাত্র প্রতীকী বানিয়ে রাখলে চলবে না। জীবনের প্রতিটি দিনই হতে পারে ক্ষমার দিন—যেখানে আমরা ভালোবাসা, সমঝোতা আর সহনশীলতার পথ বেছে নেব। আসুন, আজ থেকে শুরু হোক সেই যাত্রা—ক্ষমার ছায়ায় খুঁজে নেওয়া যাক শান্তির ঠিকানা।