নরেন্দ্রনাথ কুলে
কসবা ল'কলেজে ধর্ষণ কান্ডে বাংলার শাসক দলের দু'জন জনপ্রতিনিধির মন্তব্য নারীর প্রতি মর্যাদাহানিকর । তা নিয়ে শাসকদলের মধ্যে 'গৃহদাহ' বেঁধেছে বলে সংবাদ পরিবেশিতও হয়েছে । বাংলার শাসকদল তাদের এই নেতৃত্বের নারীর প্রতি অপমানকর মন্তব্য দল কখনোই অনুমোদন করে না বলে প্রচার হয়ে থাকে । যে নেতৃত্বের মন্তব্য তা তাদের ব্যাক্তিগত হলেও দল এমন মন্তব্যকারী এক নেতাকে শোকজ করেছে । দলের শৃঙ্খলা ও সংস্কৃতি ভঙ্গকারীকে দল কখনো প্রশ্রয় দেয় না । সেই বার্তা দিতেই তাকে শোকজ করা হয়েছে। দলের এই পদক্ষেপ খুবই ভালো । কিন্তু নারীর প্রতি মর্যাদাহানির মন্তব্যের সকল ঘটনার ক্ষেত্রে দল কি পদক্ষেপ নেয় বা নিতে পারে ? আগের অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে দলের এমন সক্রিয় অবস্থান দেখা যায়নি । নেতৃত্বের শ্রেণী বিভাগে হয়তো তার সক্রিয়তা । তৃণমূল দলের প্রতিষ্ঠাত্রী যার অনুপ্রেরণা ছাড়া দল থেকে প্রশাসন কেউই এক-পা-ও নড়ে না, ধর্ষিতা সম্পর্কে তার মন্তব্যের ইতিহাস উল্লেখ করলে বোঝা যাবে যে তার অধস্তন দলীয় নেতৃত্ব তাকেই অনুসরণ করেছে মাত্র ।
২০১২ সালে পার্কস্ট্রীট ধর্ষণকান্ডে তিনি বলেছিলেন মেয়েটির চরিত্রের দোষ ছিল, খদ্দেরের সাথে দর কষাকষি নিয়ে বচসা হয়েছিল । ২০১৩ সালে কামদুনি কান্ডে তার মন্তব্য ছিল, শরীর থাকলে যেমন একটু-আধটু জ্বর-জ্বালা হয়, তেমন একটু আধটু রে-প হয় । ২০২২ সালে হাঁসখালির ঘটনায় তিনি বলেছিলেন, এটাকে রেপ বলবেন নাকি প্রেগন্যান্ট বলবেন ? মেয়েটির নাকি লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল বলে শুনেছিলেন বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। এছাড়াও বীরভূম, বর্ধমান কান্ডে ধর্ষণ নিয়ে তিনি বিরূপ মন্তব্য এমনভাবে করেছিলেন যে ধর্ষণের ঘটনা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় । তাই তার কাছে ধর্ষক কোন ভয়ংকর বস্তু নয় । তবে গতবছর আর জি কর অভয়া কান্ডে ধর্ষকের ফাঁসি চেয়েছিলেন। যদিও অভিযুক্ত ধর্ষকের আড়ালে প্রকৃত ধর্ষকদের বাঁচাতে তিনি ফাঁসির দাবি-যে তুলেছিলেন তার ইঙ্গিত মিললেও এখনো প্রমাণিত হয়নি । আসলে প্রমাণ লোপাট করার খেলা যে হয়েছে তার ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে । তাহলে চলমান এই পরিবেশে তৃণমূলের শোকজ খাওয়া নেতার নারীর মর্যাদাহানিকর মন্তব্য ধারাবাহিক অনুপ্রেরণার স্রোতেই জন্মেছে ও বেড়ে উঠেছে, তা কি বলা যায় না ? অথচ তৃণমূল দলের প্রতিষ্ঠাত্রীর ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্যের কারণে দল তাকে শোকজ করেনি । তিনি দলের সর্বেসর্বা এবং প্রতিষ্ঠাত্রী বলে কি কোন পদক্ষেপ দল নেয়নি । নাকি তার মন্তব্যে তখন নারীর কোন মর্যাদাহানি হয়নি ।
প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসনে একজন নারী আসীন থেকেও যদি নারীর সম্মানহানি হয়, নারীর নারীত্বকে নিজে কালিমালিপ্ত করেন তাহলে তার এবং তার দলের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আলাদা করে আর পরিচয় না দিলেও চলে ।