পিয়া রায়
প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও মানবিকতার প্রতীক ড. এপিজে আব্দুল কালামের প্রয়াণ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় এক প্রজ্ঞাবান, বিনয়ী ও স্বপ্নবাজ রাষ্ট্রনায়কের কথা, যিনি ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন তাঁর অসাধারণ জীবনদর্শন ও সরলতায়। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই, মেঘালয়ের শিলংয়ে আইআইএম-এ বক্তৃতা দিতে গিয়ে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবেই তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন—এইটিই তাঁর প্রকৃত পরিচয়।
এপিজে আব্দুল কালাম ছিলেন শুধু একজন বিজ্ঞানী বা রাষ্ট্রপতি নন, ছিলেন একজন শিক্ষক, একজন পথপ্রদর্শক, যিনি বিশ্বাস করতেন—“স্বপ্ন সেটা নয় যা ঘুমিয়ে দেখা যায়, স্বপ্ন হলো সেটা যা ঘুমাতে দেয় না।” তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল রামেশ্বরমের এক সাধারণ পরিবারে, কিন্তু নিজের অধ্যবসায়, নিষ্ঠা ও স্বপ্নের জোরে তিনি পৌঁছেছিলেন রাষ্ট্রপতির আসনে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) ও প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (DRDO)-তে কাজ করে তিনি ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জনক হয়ে ওঠেন। ‘অগ্নি’, ‘পৃথ্বী’ কিংবা ‘পোখরান’-এর সফলতা ছিল তাঁর দূরদৃষ্টি ও নেতৃত্বের প্রতিফলন।
তাঁর মৃত্যুর পর গোটা দেশ যেন নিঃশব্দে শোকাহত হয়েছিল। রাজনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা—সব কাঁদছিল একজন মনীষার জন্য, যিনি নিজের সহজ-সরল আচরণে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। তাঁর বক্তৃতা, লেখালেখি, এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ভীষণ প্রাণবন্ত। তিনি সব সময় শিশুদের বলতেন—“তোমরা আলাদা করে ভাবো, সাহস করে এগিয়ে চলো, আর দেশের জন্য কিছু করে যাও।”
তাঁর জীবনদর্শন শিক্ষাদান করে—স্বপ্ন দেখা ও তা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। তাঁর লেখা বই “Wings of Fire”, “Ignited Minds”, “India 2020”—তরুণদের মনে আলোর দিশা দেখিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষাই একটি জাতির সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র এবং একজন শিক্ষকই পারে জাতিকে গড়ে তুলতে।
===============
পড়ুন আর. অঞ্জলি-র লেখা
এপিজে আবদুল কালাম-এর জীবনী
[ বইটি পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন ]
===============
আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা শুধু এক প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে স্মরণ করি না, স্মরণ করি একজন আদর্শ মানুষকে—যিনি বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছিলেন মানবতার সেবা করার জন্য, রাষ্ট্রপতির গৌরবময় পদেও ছিলেন নিঃসঙ্গ সাধকের মতো, এবং মৃত্যুর মুহূর্তেও ছিলেন ক্লাসরুমে, শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ড. কালাম আমাদের শিখিয়ে গেছেন—দেশপ্রেম মানে শুধু পতাকা তোলা নয়, বরং প্রতিদিন নিজের কাজকে সৎভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে করা। তাঁর প্রস্থানে একটি যুগ শেষ হয়েছিল, কিন্তু তাঁর চিন্তা, তাঁর দর্শন, তাঁর স্বপ্ন আজও আমাদের পথ দেখায়। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন ভারতের প্রতিটি তরুণের মনে, প্রতিটি স্বপ্নদ্রষ্টার হৃদয়ে—এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা হয়ে।


