Select language to read news in your own language

All India Strike শুধু কি শ্রমিকের স্বার্থে ?

পাঠক মিত্র


আগামীকাল (০৯.০৭.২৫) ধর্মঘট । দশটি বাম শ্রমিক সংগঠনের ডাকে এই ধর্মঘট । এই ধর্মঘটে যদিও শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন সামিল নয় । শাসক দলের সমর্থিত শ্রমিক কি বঞ্চিত নয় ? শুধু কি বাম সমর্থিত সংগঠনের শ্রমিক বঞ্চিত ? শ্রমিক বঞ্চিত হলেও শাসক দল ও তার মদতপুষ্ট ইউনিয়নের কাছে প্রশাসনটাই প্রাধান্য রূপে দেখা দেয় । 
ধর্মঘট রুখতে সব প্রশাসনের পদক্ষেপের ইতিহাস এক । দেশ এগিয়ে চলেছে । দেশের অর্থনীতি শক্তিধর দেশগুলিত স্পর্শ করতে চলেছে । আজকের রাষ্ট্রনেতাদের কথায় সেই স্পর্শ ফুলে ফুলে উঠছে । সেই ফোলানো কথায় কৃষক, শ্রমিকের স্বস্তি নেই। তবে তাদের প্রতিশ্রুতি, প্রকল্প মানুষের নামে, দেশের নামে না থাকলে অবশ্য মানায় না। এই ধর্মঘট শ্রমিকদের স্বার্থে । শ্রমিকের স্বার্থ কি দেশের স্বার্থ নয় ? আর্থিক উন্নয়ন দেশের, অথচ শ্রমিকের স্বার্থ বঞ্চিত । আজকের শ্রমিকের স্বার্থ মানেই তো চুক্তির কাজ । চুক্তির কাজে তাঁদের জীবন এগিয়ে যায় কি ? চুক্তির কাজে কিভাবে অনিশ্চয়তা নামে তা কি আজও পরিষ্কার নয় ?দেশে আজকের যে কর্মসংস্থান তার বেশিরভাগই কিন্তু চুক্তির কাজ । বেসরকারিকরণের মধ্যে চারিদিকে তার রূপায়ণ অতি ত্বরিত গতিতে এগিয়ে চলেছে । তাই ঠিকায় আজ শ্রম দিচ্ছে মেধাশ্রমিক থেকে সকলেই । এই কথাটা কেবল পরিবেশনের কায়দায় অনেক বড় করে তোলা হচ্ছে । যেমন চুক্তি সৈনিক হবে 'অগ্নিবীর' । তাহলে এতদিন যাঁরা সেনাবাহিনীতে ছিলেন বা আছেন তাঁরা কি অগ্নিবীর ছিলেন না । দেশের উন্নয়নের গর্বে আত্মহারায় আত্মনির্ভর হতে পারেন রাষ্ট্রনেতারা । কিন্তু শ্রমিক ঠিকায় কাজ করবে, শিক্ষক স্কুলে চুক্তিতে পড়াবে, সৈনিক সে দেশকে রক্ষা করবে চুক্তির ভিত্তিতে । দেশের উন্নয়ন নিয়ে যখন গর্বের বেলুন উড়ছে, তখন মানুষকে চুক্তির বেড়াজালে ঘিরে ফেলা হচ্ছে । সেই চুক্তি আসলে কাদের সুবিধা করে দেয় সে কথা আজ যুব সমাজের কাছে এখনো পরিষ্কার না হলেও তাঁদের কতদিন চুপ করিয়ে রাখতে পারবে । তাঁরা যখন বুঝতে পারবে তাঁদের জীবন চুক্তিতে চলতে পারে না ।  
শিল্পপতিদের সুবিধে দিতে-যে আজ শ্রমিক আইন সংশোধনের পথ করেছেন তাতে কিন্তু শ্রমিকের স্বার্থ ছিটেফোঁটা নেই ।  
আজকের সময়ে বারো ঘন্টার কাজ কিন্তু সর্বত্র । এমনকি সরকারি ক্ষেত্রেও । রেল পরিষেবায় বারো ঘন্টার রস্টারে রেলকর্মীরা কাজ করেন স্টেশনে স্টেশনে । এই করোনাকালের প্রথম আনলক পর্বে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত শ্রমিকদের বারো ঘন্টা কাজ করার আইন আনতে চেয়েও প্রতিবাদের চাপে তা করতে পারেনি । কেন্দ্রীয় সরকার তখন নিশ্চুপ ছিল । শ্রমিকদের সুবিধার জন্য যখন সরকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শ্রমিকরা হলেন আসল বিশ্বকর্মা । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কথা থেকে বলা যায় শ্রমিক এ দেশে বেশ যত্নে আছে । তবে সেই শ্রমিক যত্ন পেতে পারে বারো ঘন্টা খেটে । কিন্তু বারো ঘন্টা খাটলেই শ্রমিক যত্ন পাবে এমন নিশ্চয়তা নেই । কারণ এই আইনেই বলা হচ্ছে শ্রমিকের ছাঁটাই করার ক্ষমতা মালিকের । সেখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না । বিশেষ করে যেখানে তিনশ কর্মী পর্যন্ত কাজ করে এমন সংস্থার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য । দেশে যেখানে পঁচাত্তর শতাংশ শিল্প সংস্থায় অনধিক তিনশ কর্মী কাজ করে সেখানে এই আইন শ্রমিকদের জন্য কতটা বিপজ্জনক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । আবার কোনো সংস্থায় শ্রমিকদের আন্দোলন করে ধর্মঘট করা চলবে না । ধর্মঘটে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি শ্রমিকের অনুমতি না থাকলে ধর্মঘট করা যাবে না । তবে ধর্মঘট ডাকলে ষাটদিন আগে নোটিশ দিতে হবে । তার মানে সংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠনের পায়ে বেড়ি লাগানোর জন্য এ প্রক্রিয়া । সংগঠিত শ্রমিকদের অবস্থা এমন হলে অসংগঠিত শ্রমিক, চুক্তি শ্রমিক ও পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা সুস্থ যে থাকবে না তা পরিষ্কার । দেশের শ্রম আইনকে ব্যবসাবান্ধব করতে গেলে তা শ্রম বান্ধব করা সম্ভব নয় । যার ফলে দেশে পঞ্চাশ কোটি শ্রমিক বিপর্যস্ত হবে । ব্যবসাবান্ধব শিল্প অথচ শ্রমিক সংকটে থাকবে । দেশে যদি এত বিশাল সংখ্যক মানুষ বিপর্যস্ত হয় তাহলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা থাকতে পারবে সে কথা একেবারেই বলা যায় না । তাহলে এই আইন-যে শ্রমিকমুখি না হয়ে মালিকমুুুখি হবে তা পরিষ্কার । 
কেন্রীয় সরকারের এই সংশোধনী শ্রম আইনের বিরোধিতা তৃণমূলকে কোনোভাবেই করতে দেখা যায় নি । অথচ ধর্মঘট রুখতে তার ভয় ধরানো ঐতিহাসিক পদক্ষেপ থাকে । এবারেও তার ব্যতিক্রম নয় । তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবসাবান্ধব শিল্পে শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী আইনের সমর্থক তৃণমূল । শ্রমিকের সংকট মানে মানুষের সংকট নয় বলে তাঁদের কাছে মনে হয় । যদিও এ পর্যন্ত তৃণমূলের জনদরদীর প্রচারে জনগণ তুষ্ট বলেই তাঁরা গর্বিত । তবে শ্রমিকের সংকট, মানুষের সংকট রাজনীতির প্রতিশ্রুতিতে চাপা পড়ে থাকলেও, যুব সমাজের সংকটকে কিন্তু আর চাপা দেওয়া সহজ হয়ে উঠবে না । এই যুব সমাজ যখন আরো উপলব্ধি করবে যে তাঁরাই আগামী দিনের শ্রমিক, আগামীদিনের শিক্ষক, আগামীদিনের সৈনিক, কিন্তু সবক্ষেত্রেই চুক্তির জীবন তখন তাঁদের আর কোনো প্রতিশ্রুতিতে চুপ করিয়ে রাখা যাবে না ।
আর একদিকে জাতীয় সম্পত্তি মালিকের হাতে তুলে দিয়ে এই সমাজে যুবসমাজের জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিতে চাইছে । অন্নদাশঙ্করের ছড়াটির অর্থ আজকের সময়ের মত যেন অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় । 'তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর পরে রাগ কর/তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙে ভাগ কর ।' এই ভাঙা চলছে একদিকে ধর্ম নিয়ে, আর একদিকে দেশের বেশিরভাগ সম্পত্তি জমা হচ্ছে এক ক্ষুদ্রশ্রেণীর হাতে, আর বিশাল অংশের মানুষ দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি আর প্রকল্পের উন্নয়নে চুক্তির জলে ভাসছে । অথচ দেশ নাকি উন্নয়নে ভাসছে ! 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: