পিয়া রায়
প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। পরিবেশের প্রতি সচেতনতা ছড়ানোর এই দিনটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি যেন আমাদের জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে। সময় যতই এগোচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে প্রকৃতি আর আমাদের সহ্য করতে পারছে না। আবহাওয়ার চরম রূপ, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা, প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়া—সবকিছুর পেছনে আছে মানুষের অতি লোভী ও অসচেতন আচরণ। এবার ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য—"Our Land. Our Future. We are #GenerationRestoration"—একটি প্রত্যয়ী বার্তা বহন করছে। এটি কেবল রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতি নয়, আমাদের প্রত্যেকের প্রতি আহ্বান।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের সূচনা ১৯৭২ সালের স্টকহোম সম্মেলনের পর ১৯৭৪ সালে প্রথম পালন থেকে। সেই সময় পৃথিবীর পরিবেশ সমস্যা নিয়ে মানুষ সচেতন হতে শুরু করেছিল। কিন্তু আজ, অর্ধ শতাব্দী পার করে, আমরা যেন আরও বড় সংকটে আছি। শহরের বাতাস বিষাক্ত, নদী ও সমুদ্র দূষণের ভারে নুয়ে পড়েছে, বনভূমি উজাড় হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। মানুষের তৈরি এই সংকটের শিকার হচ্ছে মানুষ নিজেই।
এবারের প্রতিপাদ্য মূলত ভূমি রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। মরুভূমির বিস্তার, কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাওয়া, বনভূমি ধ্বংস, মাটির ক্ষয়—এসবই এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জলের প্রাপ্যতা ও বাসযোগ্য পরিবেশের ওপর। এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা যদি নিজেরা পরিবর্তন শুরু না করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোনো বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারবো না।
প্রতিটি মানুষের রয়েছে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখার সুযোগ। ঘরে বসেই শুরু করা যায় পরিবর্তন। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজে আমরা পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে পারি—যেমন গাছ লাগানো, বিদ্যুৎ ও জলের অপচয় রোধ, প্লাস্টিক বর্জনের অভ্যাস গড়া, সচেতনভাবে বাজার করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে সংযম রাখা।
পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবল বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী কিংবা সরকারকে দিয়ে নয়—এটি আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। আমাদের ছোট পদক্ষেপই একদিন বড় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সমাজকে। কারণ, আমরা যেমন পরিবেশকে ব্যবহার করি, তেমনই পরিবেশ আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়।
এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের উচিত প্রতিজ্ঞা করা—আমরা কেবল পৃথিবী থেকে গ্রহণ করবো না, তাকে ফিরিয়েও দেবো। সবুজে বাঁচবো, সবুজ গড়বো। যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ, সবুজ ও নিরাপদ পৃথিবী পায়।