নরেন্দ্রনাথ কুলে
দূষণের কথা বললে দূষণ কি শুধু বাতাসে, তা ত নয় । জলে, স্থলে এমনকি মানুষের খাদ্যে । বেগুন, পটল, শসা প্রভৃতি সব্জিকে টাটকা করে তোলার জন্য কৃত্রিম রঙ করছে । যে রঙ শরীরের পক্ষে বিষ । ইউরিয়া সার দিয়ে ভাজা মুড়ি বাজার ছেয়ে আছে । মাছ টাটকা বলে মনে হবে বলে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে যা ডেডবডির পচন রুখতে ব্যবহার করা হয় । একটা সময় ভাগাড়ের মাংস কান্ড কলকাতায় তোলপাড় হয়েছে । লাভ আর লোভ মানুষকে মানুষ আর রাখে না । ভেজাল তেল, খাদ্যশস্য ত রয়েছেই । আইন আছে, আবার মানুষের সাহস আছে । আর এই সাহস বাড়ে কেন ? প্রশাসন কোনো এক অজ্ঞাত কারণে চোখ উল্টে থাকে বলেই । তাই সঠিক পথে এই সাহসী মানুষেরা চলতে পারে না । আসলে এই সাহসিকতার মানুষ সংখ্যায় কম, কিন্তু এদের লোভের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভুগতে থাকে ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিন্তু জানে এখন আর আগের মত খাঁটি কিছু পাওয়া যায় না । ভেজাল পরিবেশের জন্য মানুষের এত রোগে ভোগা তা সাধারণ মানুষ জানে । জানলেও তা থেকে বাঁচার উপায় জানা নেই ।
শুধু তাই নয়, মুনাফার প্রয়োজনে পাহাড়, জঙ্গল আজ মুনাফাখোরের হাতে চলে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতায় কিংবা মদতে । তার মাশুল এ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ আজ সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে । সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত আজ এই মুনাফাকারীর লোভে ।
দেশ, প্রশাসন আর সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র, ভোট, উন্নয়ন এই বৃত্তে শুধু কথা বলবে । পরিবেশের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা উন্নয়নেরই প্রধান অংশ, সে কথাটা উন্নয়নের নামে যত ভুলে যাবে তত মাশুল দিতে হবে মানুষকেই । এখন প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যু ঘটছে পরিবেশ দূষণের কারণে ।
মানুষ নিজেকে ভোগে উপভোগে পরিবেশের সৌন্দর্য লুণ্ঠন করে । এ কথা প্রমাণ হয়েছে উষ্ণায়ণে । শিল্প সভ্যতা মানব সভ্যতাকে একদিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে গেছে আর একদিকে অচিরে মানব সভ্যতার কবর খুঁড়েছে । যে দেশ যত উন্নত, উষ্ণায়ণের জন্য সেই দেশ তত দায়ী । পৃথিবীকে সুস্থ রাখতে শুধু কথা নয়, কাজেই তার প্রমাণ দিতে হবে । নইলে পৃথিবী একদিন মানুষের বাসযোগ্য আর থাকবে না ।
