পিয়া রায়
প্রযুক্তি যে কতটা গভীরভাবে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, তার সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ হলো সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার (বর্তমানে এক্স), ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, লিঙ্কডইন বা নতুন প্রজন্মের স্ন্যাপচ্যাট, টেলিগ্রাম, থ্রেডস—সবাই এক অদৃশ্য সুতোয় বেঁধে ফেলেছে বিশ্বকে। এই ডিজিটাল সংযোগকে উদযাপন করতেই ৩০ জুন পালিত হয় Social Media Day—একটি দিন যা শুধু অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এক যুগান্তকারী মানবিক অভিজ্ঞতার কথা বলে।
একসময় দূরত্ব মানেই যোগাযোগহীনতা। বিদেশে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলাও ছিল ব্যয়বহুল ও কঠিন। এখন এক ক্লিকে দেখা, কথা, ছবি, গান—সবই সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের করেছে বিশ্বনাগরিক, দিয়েছে অভিব্যক্তির মুক্ত জায়গা। আজ কেউ কোথাও অন্যায় দেখলে সরাসরি লাইভে আসে, কেউ নিজের শিল্প তুলে ধরে, কেউ আবার গড়ে তোলে ক্যারিয়ার এই প্ল্যাটফর্মেই।
কিন্তু এই অদ্ভুত সহজতা যেমন আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, তেমনি এনেছে কিছু গভীর সংকট। ‘ভিউ’, ‘লাইক’, ‘ফলোয়ার’ এখন পরিচয়ের মাপকাঠি। আত্মসম্মান যেন নির্ভর করছে অন্যের প্রতিক্রিয়ার ওপর। একসময় যারা রচনায় ডুবে থাকত, এখন তারা কনটেন্ট তৈরি করে ট্রেন্ডে ওঠার জন্য। বাস্তবতা ও ভার্চুয়াল বাস্তবের ব্যবধান দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।
তবুও, এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা অস্বীকার করা যায় না। রাজনৈতিক আন্দোলন, সচেতনতা গড়ে তোলা, জনমত গঠন—এসব কিছুতেই এর প্রভাব অগাধ। এমনকি মহামারির সময়েও এর মাধ্যমে ছড়িয়েছে সাহায্যের আবেদন, সংবাদের গতি ও প্রেরণার শক্তি।
এই দিনে প্রশ্ন উঠবেই—আমরা কীভাবে ব্যবহার করছি এই অসীম শক্তিকে? আত্মপ্রচারের অস্ত্র হিসেবে, না কি সমাজ বদলের মাধ্যম হিসেবে? যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি মানুষের হাতেই, তাই সেটিকে গঠনমূলক ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব।
Social Media Day কেবল ডিজিটাল উদ্ভাবনের উৎসব নয়, বরং আত্মবিশ্লেষণের একটি সময়। একদিকে এটি আমাদের দিয়েছে নতুন দৃষ্টি, অন্যদিকে আত্মবিপণনের দুঃসহ চাপ। এই দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করব সংযোগের জন্য, শ্রদ্ধার জন্য, সৃজনের জন্য।
স্ক্রলের আড়ালে যে জগৎ গড়ে উঠছে, তা যেন হয় সচেতন, সহানুভূতিশীল ও সত্যভিত্তিক—এই হোক সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকৃত সার্থকতা। কারণ প্ল্যাটফর্ম বদলাবে, ট্রেন্ড আসবে-যাবে—কিন্তু মানবিকতা যদি থাকে, তাহলেই প্রযুক্তি হয়ে উঠবে মানবতার সহযাত্রী।


