ছন্দা আচার্য
প্রতিটি দেশের উন্নয়ন, পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে যে মৌলিক স্তম্ভটি নীরবে কিন্তু অটলভাবে কাজ করে, তা হলো পরিসংখ্যান। ভারতের প্রেক্ষাপটে এই সংখ্যার দুনিয়াকে সম্মান জানাতেই প্রতি বছর ২৯ জুন পালিত হয় National Statistics Day। এই দিনটি বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ প্রফেসর প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিস-এর জন্মদিন উপলক্ষে সরকারিভাবে পালিত হয়, যিনি আধুনিক ভারতের পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃত।
পরিসংখ্যান বলতে অনেকেই বোঝেন কেবলমাত্র কঠিন সূত্র, চার্ট, হিসাব বা ডেটার সমাবেশ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পরিসংখ্যান সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলে—স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, পরিবেশ থেকে শুরু করে প্রযুক্তি পর্যন্ত সবকিছুতেই। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সঠিক তথ্য বিশ্লেষণ করা, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেওয়া বা সমস্যার উৎস খোঁজার জন্য পরিসংখ্যানই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার।
ভারতে এই শাস্ত্রের উন্নয়নে যিনি বিপ্লব এনেছিলেন, তিনি হলেন প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিস। তিনি ১৯৩১ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (ISI) প্রতিষ্ঠা করেন এবং জাতীয় পরিকল্পনায় পরিসংখ্যানকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ভারতকে বৈজ্ঞানিকভাবে নীতিনির্ধারণের পথে নিয়ে যান। তাঁর তৈরি “মহলানবিস দূরত্ব” এখন বিশ্ব পরিসংখ্যানবিদ্যায় একটি সুপরিচিত গাণিতিক পদ্ধতি।
এখনকার ডিজিটাল যুগে পরিসংখ্যান আরও বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ। বিগ ডেটা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং-এর জগতে পরিসংখ্যান একটি অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন সরকারি স্কিম, বাজেট বরাদ্দ, জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা—সবকিছুই গড়ে ওঠে এই সংখ্যার নির্ভুল বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও সংক্রমণের হার, মৃত্যু, টিকাকরণের অগ্রগতি—সব পরিমাপেই পরিসংখ্যান মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
আজকের দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিসংখ্যান চর্চাকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ এটি শুধু পেশাগত ক্ষেত্রেই নয়, সচেতন নাগরিক হিসেবেও বিশ্লেষণক্ষমতা গড়ে তোলে। পরিসংখ্যান জানলে আমরা বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি, এবং সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি।
National Statistics Day আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সংখ্যা কখনও মিথ্যে বলে না, যদি তাকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এই দিনে আমরা শুধু এক বিজ্ঞানীর কীর্তিকে স্মরণ করি না, বরং সংখ্যার জগতে ভবিষ্যতের নতুন দিশা খোঁজার প্রতিজ্ঞাও করি। কারণ, সঠিক পরিসংখ্যান মানেই একটি সঠিক সিদ্ধান্ত, আর সঠিক সিদ্ধান্তই গড়ে তোলে একটি উন্নত, সুস্থ, সচেতন সমাজ।