Select language to read news in your own language

রঙিন সুতোয় মোড়া প্রতিবাদের ভাষা— International Yarn Bombing Day


ছন্দা আচার্য

 

শিল্প শুধু ক্যানভাস বা গ্যালারিতে আটকে নেই, তা ছড়িয়ে পড়ে রাস্তাঘাট, গাছ, খুঁটি, বাসস্ট্যান্ড বা পার্ক বেঞ্চেও। আর এই ব্যতিক্রমী শিল্পের নামই হলো ‘ইয়ার্ন বম্বিং’। প্রতিবছর ১১ জুন পালিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন বম্বিং ডে’—একটি অভিনব ও বর্ণময় দিবস যা বিশ্বজুড়ে সৃজনশীলতা, প্রতিবাদ এবং নারীর কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরতে সুতো ও কাঁটার সাহায্যে সৃষ্টি করে জনপথজুড়ে শিল্পের বিপ্লব।

ইয়ার্ন বম্বিং মূলত ‘গেরুয়া’ বা ‘ক্রোশেট’ করা কাপড়ের টুকরো দিয়ে জনস্থানগুলিকে অলংকরণ করার একটি পথশিল্প আন্দোলন। এটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায় ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে, যেখানে ম্যাগডা সায়েগ নামের এক শিল্পী তার দোকানের দরজার হাতল ঢেকে দেন রঙিন গেরুয়া কাপড়ে। সেই একক প্রয়াস এখন এক আন্তর্জাতিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে, যেখানে শিল্পীরা রাস্তায়, পার্কে, ট্র্যাফিক সিগনালে কিংবা খোলা স্থানে নানা রঙিন সুতো দিয়ে সৃষ্টি করেন সাময়িক শিল্প—যা একদিন অদৃশ্য হয়ে যায়, কিন্তু মনে থেকে যায় শিল্প ও প্রতিবাদের এক গভীর ভাষা হয়ে।

এই দিবসটি কেবল একটি শিল্প উদ্‌যাপন নয়, এটি একধরনের শান্তিপূর্ণ সামাজিক প্রতিক্রিয়া। যুদ্ধ, দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, পরিবেশ দূষণসহ নানা বিষয়ে সচেতনতা ছড়াতেও ব্যবহার করা হয় এই গেরুয়া শিল্প। কেউ কারো ঘর ভাঙে না, গায়ে রং মাখায় না, শুধু রঙিন সুতোর জাল বিছিয়ে দেয় মানুষের মন ছোঁয়ার জন্য। এই গেরুয়া শিল্প নারী শিল্পীদের মধ্যেই বেশি জনপ্রিয়, যারা নিভৃতে ঘরে সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দেন, আর ইয়ার্ন বম্বিং হয়ে ওঠে তাদের আত্মপ্রকাশের এক সাহসী মাধ্যম।

বিশ্বের নানা প্রান্তে এই দিনে সংগঠিত হয় গেরুয়া ইনস্টলেশন, কর্মশালা, ও শিল্প-উৎসব। কেউ গাছের গায়ে রঙিন মোজা পরিয়ে দেন, কেউ বা সেতুর রেলিংকে রূপ দেন জ্যামিতিক ডিজাইনে। শহরের একঘেয়ে রূপে আসে উজ্জ্বল রঙের বিপ্লব, যা শুধু নজরকাড়ে না, বরং ভাবায়ও।

আজকের প্রযুক্তিপ্রেমী, কৃত্রিমতায় ডুবে থাকা সময়ে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন বম্বিং ডে আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানবিক স্পর্শ ও সৃজনশীলতা এখনও আমাদের অস্তিত্বের মূল সুর। রঙিন সুতোয় মোড়া এই প্রতিবাদের ভাষা যেন কখনও নিঃশেষ না হয়, বরং ছড়িয়ে পড়ে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে আরও বিস্তৃত দিগন্তে। এই শিল্পে নেই কোনো ভাঙচুর, নেই কোনো রক্তপাত—তবুও এটি এক বিপ্লব, শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল বিপ্লব।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon