পিয়া রায়
মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই কিছু সম্পর্ক সময়, সংস্কৃতি বা পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে। সেই চিরন্তন সম্পর্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অটুট ও নিঃস্বার্থ সম্পর্কটি হল—পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ১ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় গ্লোবাল ডে অফ পেরেন্টস (Global Day of Parents)।
এই দিনটি শুধুমাত্র কোনও উদযাপন নয়—এটি আত্মস্মরণের একটি দিন, নিজেকে ফিরে দেখার দিন। আমরা কে? আমাদের আজকের সাফল্যের পেছনে কারা? জীবনের প্রথম কান্নার সঙ্গে যে দুটি হাত আমাদের প্রথম জড়িয়ে ধরেছিল, তাদের দিকে ফিরে তাকানোর দিন এটি।
নিঃস্বার্থ ত্যাগের এক বর্ণময় অধ্যায়
প্রতিটি পিতামাতাই তাঁদের সন্তানের জন্য এমন কিছু করেন যা পরিমাপের অতীত। কোনও হিসাবের খাতা তাদের ত্যাগকে ধরতে পারে না।
সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তাঁরা নিজেদের বর্তমান বিসর্জন দেন। নিজের সুখকে অগ্রাহ্য করে সন্তানের মুখে হাসি আনাই হয় তাঁদের জীবনের একমাত্র সাধনা।
শুধু খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা নয়—সন্তান যেন জীবনে পথ খুঁজে পায়, নিজের আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে পারে, সেই পথচলার শুরু থেকে শেষ অবধি পিতামাতার ভূমিকা এক নিরব অথচ সর্বব্যাপী আলোর মতই।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: কৃতজ্ঞতার আনুষ্ঠানিকতা
২০১২ সালে জাতিসংঘ ১ জুন দিনটিকে গ্লোবাল ডে অফ পেরেন্টস হিসেবে ঘোষণা করে। উদ্দেশ্য ছিল সুস্পষ্ট—এই দিনে যেন বিশ্ববাসী পিতামাতার অবদানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, তাঁদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে।
এই স্বীকৃতি কেবল একদিনের নয়—বরং প্রতিটি সন্তানের মনে পিতামাতার জন্য দায়িত্ব, ভালোবাসা ও যত্নের ধারাবাহিকতায় এই দিনটি হোক অনুপ্রেরণা।
প্রযুক্তির যুগে সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
আজকের এই প্রযুক্তিনির্ভর যুগে আমাদের জীবন যন্ত্রনির্ভর, সময়ের অভাবে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে। অথচ, কোনও সোশ্যাল মিডিয়া নয়—পিতামাতার গাঢ় চোখের চাহনি, সন্ধ্যায় সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষা, অসুস্থ হলে মাথায় রাখা হাত—এসবই আমাদের জীবনের সবচেয়ে স্থায়ী এবং মায়াময় যোগাযোগ।
গ্লোবাল ডে অফ পেরেন্টস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য বড় আয়োজনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হৃদয়ের আন্তরিক প্রকাশ এবং কিছু সময়।
কীভাবে পালন করা যেতে পারে?
# এক কাপ চা বা এক প্লেট প্রিয় খাবার—মা-বাবার সঙ্গে বসে সময় কাটানো
# তাঁদের ছোটবেলার গল্প শোনা—আত্মিক সংযোগ তৈরি করে
# একটি ছোট চিঠি বা হাতে লেখা কার্ড—অভিনব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
# সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়—হৃদয়ের ভাষায় বলুন, ‘তোমাদের ভালোবাসি’
উপসংহার: ভালোবাসার ঋণ কখনও শোধ হয় না
এই দিনে আমরা একটি কথাই যেন অন্তর থেকে অনুভব করি—
আমার জীবনের শুরুতেই যাঁদের ভালোবাসা পেয়েছি, তাঁদের যত্নই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
তাই গ্লোবাল ডে অফ পেরেন্টস উপলক্ষে শুধু নয়, প্রতিদিন আমরা পিতামাতাকে সময় দিন, কথা বলুন, পাশে থাকুন।
কারণ তাঁদের ভালোবাসার বিকল্প পৃথিবীর কোথাও নেই।