যোগমায়া আচার্য ও পিয়া রায়
প্রতিবছর ২৩ মে পালিত হয় বিশ্ব কচ্ছপ দিবস (World Turtle Day)। এই দিনটি কচ্ছপ প্রজাতির সংরক্ষণ এবং তাদের প্রতি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০০ সালে আমেরিকার “American Tortoise Rescue” নামক একটি সংস্থা এই দিবসটির সূচনা করে, যার মূল লক্ষ্য কচ্ছপ ও কাছিমদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল রক্ষা এবং মানুষকে তাদের গুরুত্ব বোঝানো।
কচ্ছপ: প্রকৃতির এক অবিনাশী জীবনশৈলী
কচ্ছপ পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবন্ত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞানীদের মতে, তারা ২৫ কোটি বছর ধরে এই গ্রহে টিকে রয়েছে। ধীরগতি, কঠিন খোলস, এবং দীর্ঘায়ু এই প্রাণীটিকে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি করেছে। কচ্ছপ শুধু সাগর বা নদীতেই নয়, বাস করে বন, মরুভূমি, পাহাড় এমনকি শহরের কাছাকাছিও।
বিপন্ন কচ্ছপ, বিপন্ন পরিবেশ
আজকের দিনে পৃথিবীর বহু প্রজাতির কচ্ছপ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এর প্রধান কারণ—
# বনভূমি ধ্বংস
# জলদূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্য
# অবৈধ শিকার ও বাণিজ্য
# জলবায়ু পরিবর্তন
# প্রজনন স্থানে মানুষের হস্তক্ষেপ
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও কচ্ছপের প্রজাতি যেমন “ইন্ডিয়ান স্টার টরটয়েজ” বা “গ্যাংটিক সফটশেল টার্টল” আজ বিপন্নতার মুখে।
সামুদ্রিক কচ্ছপ ও তাদের লড়াই
বিশ্বের সাতটি সামুদ্রিক কচ্ছপ প্রজাতির মধ্যে ভারতের উপকূলে পাওয়া যায় চারটি। তারা ওডিশার গাহিরমাথা, তামিলনাড়ুর মারিন বিচ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এলাকায় প্রজনন করে। কিন্তু মাছ ধরার জাল, আলো দূষণ এবং বিচে হোটেল-রিসোর্টের সম্প্রসারণ তাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
কীভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি?
# সমুদ্র ও নদীতটে প্লাস্টিক না ফেলা
# প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি
# অবৈধ কচ্ছপ শিকার ও বাণিজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
# শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জীববৈচিত্র্য বিষয়ে পাঠ অন্তর্ভুক্তি
# স্থানীয় সংরক্ষণ প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগদান
উপসংহার:
কচ্ছপ শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি ধৈর্য, দীর্ঘায়ু ও পরিবেশগত ভারসাম্যের প্রতীক। বিশ্ব কচ্ছপ দিবস উপলক্ষে আমাদের একসাথে এগিয়ে আসা প্রয়োজন এই নীরব প্রাণীটির রক্ষায়। প্রকৃতির প্রতিটি জীবের অস্তিত্ব আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত—এই উপলব্ধি থেকেই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।
“একটা কচ্ছপ বাঁচানো মানে এক টুকরো পৃথিবীকে রক্ষা করা।”
নিউজ ও ফিচার কনটেন্টের লেটেস্ট আপডেট পেতে সাতসকাল-এর ফেসবুক পেজ লাইক ও ফলো করুন