Select language to read news in your own language

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল: দ্য লেডি অফ দ্য ল্যাম্প

যোগমায়া আচার্য

 

যুদ্ধের বিভীষিকায় যখন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে, তখন একজন নারী নীরবে এগিয়ে আসেন ক্ষতবিক্ষত, যন্ত্রণাকাতর মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। তিনি ছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল—একজন ত্যাগী, সাহসিনী এবং দূরদর্শী নারী, যিনি নার্সিং পেশাকে শুধু মর্যাদা দিয়েই যাননি, মানবতার এক আলোকবর্তিকা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে এক অভিজাত ইংরেজ পরিবারে তার জন্ম। আরাম-আয়েশে বেড়ে ওঠা এই নারীর জীবনের অভিমুখ পাল্টে যায় যখন তিনি অনুভব করেন, ঈশ্বর তাকে বিশেষ কোনো কাজের জন্য মনোনীত করেছেন। তার মন পড়ে থাকে গরিব, অসহায়, ও অসুস্থ মানুষদের দিকে। পরিবারের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও তিনি নার্সিং-এর পথ বেছে নেন, যে সময়টায় এই পেশাকে সমাজে নীচু চোখে দেখা হতো।

তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ক্রিমিয়ান যুদ্ধে। যুদ্ধের ময়দানে অসংখ্য ব্রিটিশ সৈনিক মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল অপূর্ণ চিকিৎসা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর অব্যবস্থাপনার কারণে। সেই সময় ফ্লোরেন্স ৩৮ জন নার্সকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যান স্কুটারির এক সামরিক হাসপাতালে। দিনরাত এক করে কাজ করেন তারা—পরিস্কার করেন ঘর, রক্তাক্ত ব্যান্ডেজ বদলান, ওষুধ দেন, খাবার জোগান, এবং সবচেয়ে বড় কথা, দেন ভালোবাসা আর মানসিক সাহচর্য।

রাতের অন্ধকারে লণ্ঠন হাতে করে যখন তিনি রোগীদের অবস্থা দেখতে আসতেন, তখন সেই আলো যেন কেবল আগুনের নয়, মমতারও প্রতীক হয়ে উঠত। সৈনিকেরা তাকে ভালোবেসে ডাকত “The Lady with the Lamp” নামে। তার সাহস, ধৈর্য, এবং গভীর মানবিকতা শুধু যে হাজারো প্রাণ বাঁচিয়েছিল, তা-ই নয়, বদলে দিয়েছিল চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল ধারা।

যুদ্ধশেষে তিনি ফিরে এলেন এক নতুন মিশন নিয়ে। নার্সিং পেশাকে পেশাদার কাঠামো দিতে ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “The Nightingale Training School for Nurses”। এই স্কুল থেকে যে নার্সরা পাশ করে বেরোতেন, তারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে গিয়ে গড়ে তুলতেন নতুন চিকিৎসাকেন্দ্র, নতুন মানদণ্ড। নার্সিং হয়ে উঠল সম্মানজনক, প্রশিক্ষণভিত্তিক এক মহান পেশা।

নাইটিঙ্গেল শুধু নার্স ছিলেন না, ছিলেন একজন দক্ষ পরিসংখ্যানবিদও। তিনি তথ্য, চিত্র ও পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন—অপরিচ্ছন্নতা, গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনা কিভাবে মৃত্যুর হার বাড়ায়। তার তৈরি "coxcomb diagram" আজও চিহ্নিত হয় পরিসংখ্যানবিদদের ইতিহাসে এক মাইলফলক হিসেবে।

১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট, ৯০ বছর বয়সে এই মহীয়সী নারী পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। কিন্তু তার রেখে যাওয়া আদর্শ আজও অগণিত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর অনুপ্রেরণা। তাঁর জন্মদিন ১২ মে, আজও বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন আলোর সেই ফেরিওয়ালা, যিনি অন্ধকারের ভেতরেও পথ দেখিয়েছেন হাজারো মানুষকে। তাঁর জীবনের গল্প শুধু ইতিহাসের এক অধ্যায় নয়, তা এক মানবিক বিপ্লবের নাম—যেখানে ভালোবাসা, শৃঙ্খলা ও সেবাই হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বড় শক্তি।

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon