পিয়া রায়
প্রতিবছর ১৩ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় International Hummus Day—একটি বিশেষ দিন যা শুধুই একটি খাবারের নয়, বরং একটি সংস্কৃতির, ঐতিহ্যের এবং স্বাস্থ্যবোধের উদযাপন। হামাস বা ‘হুমুস’ একটি ক্রিমি, ঝরঝরে ও সুস্বাদু খাদ্য, যার উৎপত্তি মধ্যপ্রাচ্যে হলেও আজ তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে, খাদ্যরসিকদের প্রিয় তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
হুমুস সাধারণত তৈরি হয় সিদ্ধ ছোলা (চিকপি), তাহিনি (তিল বাটা), জলপাই তেল, রসুন, লেবুর রস এবং নুন দিয়ে। এটি স্বাস্থ্যকর এবং উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্য হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও, বর্তমানে এটি ইউরোপ, আমেরিকা, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোতেও রেঁস্তোরার নিয়মিত মেনুতে ঠাঁই করে নিয়েছে।
International Hummus Day উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো—মানুষকে এই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্যটির সঙ্গে পরিচয় করানো, এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। খাবার শুধু স্বাদের বিষয় নয়, এটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বন্ধনেরও ভাষা। হামাস ঠিক এমনই এক খাবার, যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে একত্র করে।
হুমুস শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও অসাধারণ। এতে রয়েছে প্রোটিন, আঁশ, হেলদি ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যারা ভেগান বা গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট অনুসরণ করেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাদ্য। সকালে রুটি বা পিতার সঙ্গে, স্ন্যাক্স হিসেবে গাজর বা ক্র্যাকার্স ডুবিয়ে, এমনকি স্যান্ডউইচেও ব্যবহার করা যায়।
তবে হুমুস নিয়ে বিতর্কও রয়েছে! ইজরায়েল, লেবানন, তুরস্ক—সব দেশই দাবি করে এটি তাদের নিজস্ব আবিষ্কার। ফলে হুমুস শুধু খাবার নয়, একটি সাংস্কৃতিক গর্বের প্রতীকও বটে। কিন্তু International Hummus Day আমাদের শেখায়—এই দাবিদাওয়া নয়, বরং ভাগ করে খাওয়ার আনন্দই আসল।
বিশ্বজুড়ে এই দিনটি নানা আয়োজনে পালিত হয়—রেঁস্তোরায় ডিসকাউন্ট, ঘরোয়া হুমুস রান্নার প্রতিযোগিতা, হুমুস টেস্টিং ইভেন্ট, এমনকি সামাজিক মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ছবি শেয়ার করে উদযাপন। স্বাস্থ্য সচেতন তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও হুমুস দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ভারতে এখনো হুমুস অনেকের কাছেই অপরিচিত, তবে ধীরে ধীরে ঢাকার রেঁস্তোরা ও সুপারশপগুলোতে এটি জায়গা করে নিচ্ছে। অনেকেই ঘরেই বানাতে শুরু করেছেন এই মধ্যপ্রাচ্যের স্বাদের হেলদি ডিপটি।
আজকের দিনে আসুন, আমরা শুধু হুমুস খেয়ে নয়, বরং এই খাবারের পেছনের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সংহতিকে সম্মান জানিয়ে International Hummus Day উদযাপন করি।
এক বাটি হুমুস—এক চুমুক ইতিহাস, সংস্কৃতি আর সুস্থতার।