Select language to read news in your own language

আত্মরক্ষার অধিকার কি শুধুই কাগজে?


সৌরদীপ রায়

আজকের সমাজে যখন অপরাধ প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে, তখন একজন প্রশিক্ষিত, সচেতন নাগরিকের আত্মরক্ষার আবেদন যদি প্রশাসনিক গোলকধাঁধায় হারিয়ে যায়, তা কেবল একজন মানুষের হতাশার গল্প নয়—তা গোটা ব্যবস্থার নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতের নগ্ন উদাহরণ।

একজন ব্যক্তি, যিনি পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী, পাশাপাশি স্টেট লেভেল শুটিং প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জনকারী, বহুদিন ধরে আইনের পথে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে আসছেন। সব নিয়ম মেনেই আবেদন করেছেন—প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট, পুলিশ ভেরিফিকেশন, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট—সব কিছুই জমা দেওয়া হয়েছে। তবু, বছরের পর বছর ধরে তাঁকে শুনতে হচ্ছে একটিই কথা: "প্রয়োজন নেই", "অপেক্ষা করুন", অথবা সরাসরি “রিজেক্টেড”।

অথচ, সমাজের আরেক প্রান্তে দেখা যায়, অবৈধ অস্ত্র হাতে মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি রাজনৈতিক মদতে অনেকেই এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে জনতাকে ভয় দেখাতে, নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে। তারা কি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত? তারা কি আত্মরক্ষার জন্য এই অস্ত্র চায়? না, তাদের উদ্দেশ্য অন্য। কিন্তু তাদের অস্ত্র পেতে বাধা নেই। আর একজন প্রশিক্ষিত নাগরিক, যিনি অস্ত্রকে দায়িত্ব হিসেবে দেখেন, তাঁকেই অস্ত্র থেকে বঞ্চিত করা হয়।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, ওই ব্যক্তি কেবল নিজের জন্য অস্ত্র চাননি। তিনি একজন নিরাপত্তারক্ষী—দিনের পর দিন অন্যের ঘর পাহারা দেন, অন্যের পরিবার রক্ষা করেন। অথচ নিজের আত্মরক্ষার জন্য সামান্য অস্ত্রের অনুমতিও পান না। তাঁর একমাত্র ‘অস্ত্র’—আত্মবিশ্বাস ও শারীরিক প্রশিক্ষণ। কিন্তু আত্মবিশ্বাস দিয়ে কি সব বিপদ ঠেকানো যায়?

প্রশাসনের দৃষ্টিতে, যেন অস্ত্র মানেই হুমকি—এটি এক দুর্ভাগ্যজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি। অস্ত্র তখনই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, যখন তা পড়ে অপাত্রের হাতে। কিন্তু একজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত, শৃঙ্খলাপরায়ণ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষের হাতে সেই অস্ত্র আত্মরক্ষার ঢাল হয়ে ওঠে—হয় সমাজের রক্ষাকবচ।

সমস্যাটা কেবল একজনের না, এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিফলন। যারা আইন মানে, যারা নিয়ম মেনে কাজ করে, তারা দিনের পর দিন অবহেলিত হয়, আর যারা আইন ভাঙে, তারা বিশেষ সুবিধা পেয়ে যায়। এ ব্যবস্থায় আমরা কোন বার্তা দিচ্ছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে?

এখানে প্রশাসনের দায়িত্ব সবচেয়ে বড়। লাইসেন্স প্রদানে শুধু সন্দেহ নয়, প্রমাণভিত্তিক বিচার চাই। প্রশিক্ষণ, নিষ্ঠা, প্রয়োজন—এই তিনটি মানদণ্ডে বিচার হলেই দেখা যাবে—অনেকেই লাইসেন্স পাওয়ার প্রকৃত দাবিদার।

এই সমাজে আইন মেনে চলা মানুষদের আস্থা হারালে, তার ক্ষতি শেষমেশ সমাজের উপরেই ফিরে আসে। অস্ত্র নয়, চরিত্রই বিচার্য—এ কথাটি প্রশাসন যতদিন না উপলব্ধি করবে, ততদিন আত্মরক্ষার অধিকার এক অলীক স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।

একজন প্রশিক্ষিত, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকের হাতে যদি বৈধ অস্ত্র থাকে, তাহলে সে কেবল নিজের নয়, আমাদের সবার নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হতে পারে।

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon



Tags: