পিয়া রায়
২১শে মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক চা দিবস (International Tea Day)—বিশ্বের কোটি কোটি চা প্রেমীর কাছে এক বিশেষ দিন। এটি শুধুমাত্র একটি পানীয়কে কেন্দ্র করে উদযাপন নয়, বরং এই দিনে স্মরণ করা হয় কোটি চা শ্রমিক, ক্ষুদ্র চাষি ও উৎপাদকদের, যাঁদের শ্রমে আমাদের প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় এক কাপ চায়ের সঙ্গে।
চায়ের ইতিহাসে এক ঝলক
চায়ের উৎপত্তি হাজার বছর আগের চীনে হলেও, আজ তা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে চা ভারতবর্ষে এসে পৌঁছায়, আর সেখান থেকে ধীরে ধীরে এটি হয়ে ওঠে আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের দার্জিলিং, আসাম, নীলগিরি—এই তিনটি চা অঞ্চল বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ।
আন্তর্জাতিক চা দিবসের তাৎপর্য
২০১৯ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর উদ্দেশ্য:
# বিশ্বব্যাপী চায়ের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের গুরুত্ব তুলে ধরা
# ক্ষুদ্র চা চাষিদের অধিকারের কথা বলা
# টেকসই চা চাষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা
এই দিনে বিভিন্ন দেশ চা প্রদর্শনী, চা চাষিদের সংবর্ধনা, ওয়েবিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চা স্বাদ গ্রহণের উৎসব আয়োজন করে।
ভারতের চা ও চা সংস্কৃতি
ভারত হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদক দেশ। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। চায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাহাড়ি জনপদের শ্রম, তাঁদের হাসি-কান্না, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের কাহিনি।
বাংলার সন্ধ্যা মানেই এক কাপ লিকার চা আর আড্ডা। উত্তর ভারতে আদা-তুলসির চা, আবার দক্ষিণে এলাচ-দুধের সুবাস—চায়ের ধরন বদলায়, কিন্তু অনুভব একটাই: উষ্ণতা।
চা হোক টেকসই, ন্যায্য ও সম্মানজনক
আজকের দিনে আমরা শুধু চায়ের স্বাদ গ্রহণ করব না, বরং ভাবব চা শিল্পের পিছনের মানুষের কথা। তাঁদের ন্যায্য মজুরি, জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই চাষের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক জায়গায় চা উৎপাদন হুমকির মুখে। তাই পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ও সরকারি সহযোগিতা আবশ্যক।
উপসংহার
এক কাপ চা শুধু ক্লান্তি দূর করে না, একে ঘিরে গড়ে ওঠে গল্প, সম্পর্ক, আন্দোলন, এমনকি শিল্প। আন্তর্জাতিক চা দিবসে আসুন, আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই সেই শ্রমিক, চাষি ও উদ্যোক্তাদের, যাঁরা প্রতিদিন আমাদের জীবনে এই স্নিগ্ধতা এনে দেন।
চায়ের কাপে কেবল চিনি বা দুধ নয়, থাকে পরিশ্রম, সংস্কৃতি ও সংযোগের স্বাদ।