ছন্দা আচার্য
প্রতি বছর ১২ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। ২০২৫ সালেও এই দিনটি উদযাপিত হচ্ছে অপরিমেয় শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে। এই বিশেষ দিনটি আধুনিক নার্সিং-এর জননী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল-এর জন্মদিন উপলক্ষে পালিত হয়। তাঁর দেখানো মানবিকতার আলোয় আজও লক্ষ লক্ষ নার্স প্রতিদিন প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠেন, রোগীদের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেন।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের থিম: "Our Nurses. Our Future. The Economic Power of Care"। এই থিমের মাধ্যমে নার্সদের শুধু স্বাস্থ্যসেবার বাহক নয়, বরং একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
নার্সরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার মেরুদণ্ড। হাসপাতালের প্রতিটি বেড, প্রতিটি ওয়ার্ড, প্রতিটি রোগীর জীবনে তাদের উপস্থিতি শুধু অপরিহার্য নয়—জীবনের আশার প্রতীক। রোগীর শারীরিক কষ্ট লাঘবে ও মানসিক স্বস্তি দিতে নার্সরা দিনরাত এক করে কাজ করেন। তাঁরা শুধু নির্দেশ পালন করেন না, বরং সাহস দেন, হাসি ফিরিয়ে আনেন এবং মৃত্যুর মুখ থেকে জীবন ফিরিয়ে আনার নিরন্তর চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন।
বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নার্সরা বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কখনও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই, কখনও পর্যাপ্ত সংখ্যক সহকর্মী নেই, আবার কখনও দীর্ঘ ঘণ্টার শিফটের পরেও ক্লান্তি উপেক্ষা করে হাসিমুখে কাজ করে চলেন তারা। এ এক নিঃশব্দ যুদ্ধ—যার বীরেরা আছেন আমাদের আশেপাশেই, কিন্তু বহু সময় তাঁদের প্রতি সম্মান বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় না।
নার্সদের অবদান শুধু হাসপাতাল বা ক্লিনিক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। তাঁরা সমাজে স্বাস্থ্য সচেতনতা, মাতৃ ও শিশু পরিচর্যা, টিকাকরণ, এবং মহামারি প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ সময়ে তারা সামনে থেকে জীবন বাজি রেখে লড়েছেন। ২০২৫ সালেও, বিশ্ব যখন নতুন রোগ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তখন নার্সদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এই বিশেষ দিনে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান নার্সদের সম্মান জানাতে আয়োজন করে বিশেষ অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পর্ব। এতে করে নতুন প্রজন্ম নার্সিং পেশার গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি হয়।
আমরা যেন এই দিনে শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বাস্তবিকভাবেও নার্সদের জন্য আরও উন্নত কর্মপরিবেশ, সম্মানজনক বেতন এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারি—এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
আন্তর্জাতিক নার্স দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আসুন, আমরা একসাথে বলি—
“ধন্য তুমি, নার্স—তোমার সেবা, সাহস ও ভালোবাসায় বেঁচে ওঠে মানবতা।”
