বিষয়া ভৌমিক
আইএএস(IAS) অফিসার পরিচয় দিয়ে এক শিক্ষিকার থেকে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মূল অভিযুক্তকে জিজ্ঞসাবাদ করে মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ির প্রধান নগর থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে মারফত জানা গিয়েছে, ধৃতরা হল সুরজিত রায় ,বিপ্লব রায়, বর্ণা রায় ও রাম নিবাস যাদব। শিলিগুড়ির বাসিন্দা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছর আগে তাঁর মোবাইলে মেসেজ আসে এক অজানা হোয়াটসঅ্যাপে(WhatsApp) নম্বর থেকে।নিজেকে আইএএস(IAS) অফিসার এবং 'র'(RAW) র সহকারী সচিব বলে পরিচয় দেন মূল অভিযুক্ত সুরজিত রায়। মোবাইল নম্বর কোথা থেকে পেল তা জিজ্ঞাসা করায় অভিযুক্ত জানিয়েছেন স্কুলের আরেক শিক্ষিকা বর্ণা রায় তাকে দিয়েছেন। এভাবেই হোয়াটসঅ্যাপে(WhatsApp) প্রতিনিয়ত কথা চলতে থাকায় সুরজিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ওই শিক্ষিকার, তাঁকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেয় সুরজিত রায় । সেখানেই থেমে থাকেনি অভিযুক্ত, নিজেকে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান বলে দাবি করেন তিনি। সে জানায় তাঁর বাবা হায়দরাবাদে আইজি(IG) পদে কর্মরত এবং মা স্কুল শিক্ষিকা। অভিযোগ, কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর অভিযুক্ত সুরজিত রায় গল্প ফাঁদতে শুরু করে, সে শিক্ষিকাকে জানায় মায়ের হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অর্থের প্রয়োজন বলে ।
ভালবাসার মানুষের উপর বিশ্বাস করে শিক্ষিকা এদিকে নিজের বেতন, সোনার গহনা বন্ধক রাখা এমনকি বাবার দোকান বিক্রি করে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা অভিযুক্তের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পাঠান। এছাড়াও শিক্ষিকা পুলিশকে জানিয়েছেন একবার শিলিগুড়ি জংশনে দেখা করার সময় অভিযুক্ত সুরজিত তাঁর গলা থেকে জোর করে সোনার চেনও খুলে নেয়।
এরপর শিক্ষিকার, দিনে দিনে সুরজিত রায়ের এহেন আচরণ ও টাকা চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সন্দেহ হয় । ১৮ মে তিনি শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটনের প্রধান নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে হলদিবাড়ি থেকে ভুয়ো আইএএস সুরজিত রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশি জেরায় উঠে আসা বর্ণা রায়ের নাম, মাটিগাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। এরপর দু'জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে প্রতারণার ৪৬ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৯ লক্ষ টাকা বর্ণা রায়ের অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। বাকি টাকা গিয়েছিল মাটিগাড়া খাপরাইলের বাসিন্দা রাম নিবাস যাদব এবং চেঙ্গরাবন্ধার বাসিন্দা বিপ্লব রায় অ্যাকাউন্টে। পুলিশ ইতিমধ্যেই প্রতারণার টাকার প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে (কেনা মোবাইল, গাড়ি ও শিক্ষিকার সোনার চেইন মিলিয়ে) । পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে সুরজিত রায়ের আসল নাম আলবোরনি সরকার, সে বিবাহিত ও এক সন্তানের পিতা। তার বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা দায়ের হয়েছে হলদিবাড়ি থানায়।