Select language to read news in your own language

এভারেস্ট জয়ের সাহসগাথা: আন্তর্জাতিক এভারেস্ট দিবসে মানুষের অদম্য অভিযাত্রার উৎসব


বিয়ার ব্রাউন

 

২৯ মে—এই তারিখটি শুধু ক্যালেন্ডারের একটি দিন নয়, বরং মানবজাতির ইতিহাসে এক বীরত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মারক। ১৯৫৩ সালের এই দিনে নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। সেই অবিস্মরণীয় দিনটিকে সম্মান জানাতেই প্রতিবছর ২৯ মে পালিত হয় International Everest Day

এই দিনটি কেবল হিমালয়ের এক চূড়া জয়ের কথা বলে না, বরং বলে মানুষের ইচ্ছাশক্তি, সাহস এবং সীমাহীন সাধনার গল্প। আজ এই দিবসে ফিরে দেখা যাক সেই মহান অভিযাত্রা, ইতিহাস, আধুনিক প্রেক্ষাপট, এবং আমাদের শিক্ষা।

এভারেস্ট – প্রকৃতির বিস্ময়

মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার (২৯,০৩১.৭ ফুট), পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া। এটি হিমালয়ের মহালাংগুর শৃঙ্খলের অন্তর্গত এবং নেপাল ও তিব্বতের সীমানায় অবস্থিত। তিব্বতীয় ভাষায় এটি পরিচিত “চোমোলুংমা” নামে যার অর্থ “বিশ্বের দেবী মা”। নেপালি ভাষায় একে বলা হয় “সগরমাথা”, অর্থাৎ “আকাশের কপালে”।

প্রথম বিজয়ের ইতিহাস

১৯৫৩ সালের ২৯ মে, ব্রিটিশ অভিযানের অংশ হিসেবে স্যার এডমন্ড হিলারিতেনজিং নোরগে ইতিহাস গড়েন। তাঁরা পৌঁছেছিলেন সেই শিখরে, যেখানে মানুষের পা আগে কখনও পড়েনি। অক্সিজেনের অভাব, প্রচণ্ড ঠান্ডা, অপ্রত্যাশিত ঝড়—সবকিছুকে জয় করে তাঁরা ছুঁয়েছিলেন শিখরের স্বপ্ন।

এই জয় কেবল একটি পর্বতের নয়, বরং এক অজেয় সীমার বিরুদ্ধে মানুষের বিজয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এরপর থেকেই এভারেস্ট হয়ে ওঠে বিশ্ব অভিযাত্রাপ্রেমীদের চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ।

এভারেস্ট দিবসের তাৎপর্য

International Everest Day শুধু ইতিহাস স্মরণ করার জন্য নয়, বরং পর্বতারোহণ, অভিযাত্রীতা, পরিবেশ রক্ষা এবং সাহসিকতার শিক্ষাকে উদযাপন করার দিন। এই দিনে নেপালসহ বিশ্বের নানা দেশে আয়োজন হয় র‍্যালি, আলোচনা সভা, ফটো প্রদর্শনী, এবং পরিবেশ-সচেতনতা কর্মসূচির।

বিশেষ করে নেপাল সরকার এভারেস্ট দিবসকে জাতীয় গৌরবের প্রতীক হিসেবে পালন করে থাকে। কারণ এভারেস্ট জয় শুধু নেপালের ভূখণ্ডকে নয়, তাদের সংস্কৃতি, পর্যটন এবং অর্থনীতিকেও বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছে।

ভারত ও এভারেস্ট অভিযাত্রা

ভারতও এভারেস্ট অভিযানের ইতিহাসে গৌরবজনক অবস্থান রাখে। ১৯৬৫ সালে ক্যাপ্টেন এম.এস. কোহলি-র নেতৃত্বে প্রথম ভারতীয় দল এভারেস্ট জয় করে। পরবর্তীকালে বহু ভারতীয় নারী ও পুরুষ পর্বতারোহী এই শিখর ছুঁয়ে গেছেন। বচ্চেন্দ্রী পাল ১৯৮৪ সালে প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। এরপর সন্তোষ যাদব দুইবার শৃঙ্গজয় করে ইতিহাস গড়েন।

এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল, মণিপুর, মেঘালয়, সিকিম, আসাম থেকেও একাধিক অভিযাত্রী মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ভারতের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

আধুনিক চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক

বর্তমানে এভারেস্ট জয় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উন্নত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এবং বাণিজ্যিক অভিযানের সুবিধায় প্রতি বছর শত শত মানুষ এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করছেন। তবে এর ফলে নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে—

# পর্যটনজনিত বর্জ্য: প্রচুর অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্লাস্টিক, কাপড়ের অব্যবহৃত সামগ্রী জমছে হিমালয়ে।
# জীবনহানির আশঙ্কা: অতিরিক্ত ভিড়, ট্রাফিক জ্যামের মতো পরিস্থিতি, এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রাণহানি বাড়ছে।
# প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে: গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে হিমবাহ গলছে, বরফ কমছে, এবং ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে।

এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিযাত্রীদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। পরিবেশবান্ধব অভিযান, সীমিত ছাড়পত্র এবং স্থানীয় শেরপাদের সম্মান ও সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।

শেরপা সম্প্রদায়ের অবদান

তেনজিং নোরগে ছিলেন একজন শেরপা—একটি সাহসী ও পর্বতের সন্তান সম্প্রদায়। তাঁদের অবদান ছাড়া কোনো এভারেস্ট অভিযানই সম্ভব নয়। শেরপারা না থাকলে বহু পর্বতারোহী হয়তো শিখরে পৌঁছাতেই পারতেন না।

তাঁদের কাজ কেবল বোঝা বহন নয়, বরং পথ দেখানো, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া, ঝুঁকি মোকাবিলা করা এবং জীবন বাঁচানো। আজও শেরপারা এভারেস্ট অভিযানের নেপথ্যের আসল নায়ক।

শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা

International Everest Day আমাদের শেখায়—
# সীমা বলে কিছু নেই যদি ইচ্ছা থাকে।
# সাহস, ধৈর্য ও প্রস্তুতিই জয় আনে।
# প্রকৃতিকে জয় করা নয়, সম্মান করাই আসল।
# ঐক্য ও সহমর্মিতায় যেকোনো শিখর জয় সম্ভব।

ছাত্র-ছাত্রী, অভিযাত্রী, সাধারণ মানুষ—সবার জীবনে এই শিক্ষা প্রাসঙ্গিক। নিজের জীবনের এভারেস্ট জয় করাই হোক আজকের অঙ্গীকার।

উপসংহার:
International Everest Day উদযাপন শুধু ইতিহাস স্মরণ নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখার ও বাস্তবায়নের অনুপ্রেরণা দেয়। একটানা পরিশ্রম, পরিকল্পনা ও সাহসের জোরে কীভাবে এক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়, তা শেখায় এই দিন।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা শুধু হিলারি-তেনজিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবো না, বরং নিজেদের জীবনেও একেকটি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার প্রতিজ্ঞা নেবো।

"শিখরে পৌঁছনোই শেষ নয়, সত্যিকারের জয় হলো—সেই সাহস ও মনোভাব, যা মানুষকে শিখর ছুঁতে অনুপ্রাণিত করে।"

অনুবাদ: পিয়া রায় 

 

ads banner


ads banner

Bangla eDaily to resume soon