আবার, তাঁদের চুড়ান্ত কষ্টসাধ্য ও প্রতিকূল জীবনে চলবার এই ঐক্যের মুহূর্তগুলো নজরে পড়লেই মালিকের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক কাজ করে। এঁদের ঐক্যকে সমাজের সুবিধাবাদী, ছাপোষা, ক্ষমতার লেজুড় সম্প্রদায় ভীষণ আতঙ্কের চোখে দেখতে থাকে।
তাই, মালিকেরা কিছু সুযোগ সুবিধা ক্ষমতা দেওয়া নেওয়ার বিনিময়ে সারা জীবন ধরেই মেহনতি মানুষের মধ্যে থেকে কিছু বশংবদ মানুষ খুঁজতে থাকে। এই বশংবদ মানুষদের নিয়ে মালিক নিজেদের ঐক্য গড়ে, ম্যানেজার তৈরি করে। অসহায় মেহনতি মানুষকে জীবনের নিশ্চয়তা বা সহযোগিতা - সহমর্মিতা দেওয়ার বদলে সৃষ্টি করে কুৎসিত নজরদারির ব্যবস্থা। দৈনন্দিন জীবনে সহযোগিতার বদলে মেহনতি মানুষের ছিদ্র খোঁজা যেন মালিক ও মালিকের বশংবদ ম্যানেজারের একটা স্থায়ী কাজে পরিণত হয়। বর্তমান দুনিয়ায় এই প্রক্রিয়া বাঁচিয়ে রাখতেই আমদানি হয়েছে ঠিকা শ্রমের যাবতীয় নিয়মকানুন। এই সমস্ত কিছুর বিপরীতে অসহায় মেহনতি মানুষ ঐক্য গড়লেই লিখিত বা অলিখিত ভাবে নানান ফতোয়া বা ফরমান জারী হয়। এমনকি মালিক শাসনের সংবিধানও তৈরি করে ফেলে। এতেও মালিক সন্তুষ্ট না হয়ে নানান গুপ্তচর, আমলা, পুলিস, সেনা ও রাজনৈতিক তাবেদার নিয়োগ করে। শাসনের নিত্য নতুন ক্ষেত্র বা ভূখণ্ড নির্ধারণ করে। যা আসলে রাষ্ট্র কিম্বা রাষ্ট্রের সমান্তরাল রাজনৈতিক শাসনযন্ত্র।
বর্তমান বিশ্বজুড়েই একদিকে প্রতিটি মুহূর্ত মেহনতি মানুষ বা ভুক্তভোগী নাগরিকরা তাঁদের জীবনযন্ত্রনার অনুভূতির বিনিময়ে মিলতে চায়, ঐক্যবদ্ধ হতে চায়; অন্যদিকে, মালিক শ্রেনী এই ঐক্যের বিরুদ্ধেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানান পতাকার রঙে অগণিত লেজুড় গোষ্ঠী তৈরি করে। সব মিলিয়ে চলে সমাজ রসায়নের ক্রিয়া - বিক্রিয়া।
প্রকৃতি ও শ্রম নির্ভর সচেতন মানুষ জীবনের নানান ঘাত প্রতিঘাতে একদিকে যেমন মালিক শ্রেণীর বিভাজন নীতিকে স্পষ্ট ভাবে অনুভব করতে পারে আবার এঁরাই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সামাজিক উৎপাদন ব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে নিতে সকলকে নিয়ে বাঁচার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। শিক্ষার মান ও উৎপাদন যন্ত্রের সহযোগিতার মাত্রার উপর নির্ভর করে এই মেহনতি মানুষের ঐক্যের মাত্রা কেমন হবে। এই মেহনতি মানুষদের একদল যাঁরা প্রতি মুহূর্তে সচেতন এবং শাসন ও শোষণ যন্ত্রের নিষ্পেষণের দৈনন্দিন খবর রাখে তাঁরাই সকল শোষিত , অত্যাচারিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত ও মর্যাদাহীন মেহনতি মানুষের ঐক্যকে অটুট রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। ইতিহাসের গতিপথে এঁরাই বহন করে সমাজে সমতার বার্তা। সামাজিক চিন্তা ও বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে এঁরাই তৈরি করে সকলকে নিয়ে বাঁচবার আদর্শ। যে আদর্শ যথার্থই বহন করে সাম্যবাদের রক্তিম পতাকা। তাই নিয়েই প্রতিষ্ঠা পায় কমিউনিস্ট রাজনীতির আবেদন ও পুরিত হয় যথার্থ কমিউনিস্ট হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ঠিক এই সময় !

