পিয়া রায়
মালয়েশিয়ায় দুর্গাপুজো আজ প্রবাসী ভারতীয় এবং বিশেষত বাঙালি সমাজের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উৎসব। যদিও দেশটির প্রধান ধর্ম ইসলাম, তবে এখানে বহু ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দু জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। তাঁদেরই উদ্যোগে দুর্গাপুজো মালয়েশিয়ায় ব্যাপক উৎসাহ ও ভক্তিভরে পালিত হয়ে আসছে। কুয়ালালামপুর, পেনাং, জোহর বাহরু এবং সেলাঙ্গর অঞ্চলে দুর্গাপুজোকে ঘিরে প্রতিবছর বিশাল আয়োজন হয়। এর মধ্যে কুয়ালালামপুরের বাংলা স্কুল এবং স্থানীয় হিন্দু মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করেই প্রধান পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রবাসী বাঙালিরা চেষ্টা করেন ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য বজায় রাখতে। মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আগমন ঘোষণা করা হয় এবং এরপর শুরু হয় পাঁচ দিনের পূজা। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিনের পূজা, অঞ্জলি, ভোগ, সন্ধ্যারতি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভক্তদের মন ভরিয়ে তোলে। ভোগে সাধারণত থাকে খিচুড়ি, ল্যাবরা, বেগুনি, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি, যা ভারতীয় স্বাদ ও গন্ধকে ফিরিয়ে আনে প্রবাসীদের জীবনে। অষ্টমীর অঞ্জলি ও সন্ধ্যারতি এখানে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, যেখানে কয়েকশো মানুষ একত্র হয়ে দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন। দশমীর দিনে সিঁদুর খেলা এবং প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মালয়েশিয়ার দুর্গাপুজোকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। তবে পরিবেশগত কারণে অনেক সময় প্রতিমা বিসর্জন স্থানীয় জলাশয়ে না করে প্রতীকী আকারে সম্পন্ন করা হয়।
মালয়েশিয়ার দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় আচারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি প্রবাসী সমাজের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। পূজাকে ঘিরে নাটক, সংগীত, নৃত্য এবং শিশুদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা পরবর্তী প্রজন্মকে ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেবল ভারতীয় নয়, স্থানীয় মালয় এবং চীনা সম্প্রদায়ের মানুষও কৌতূহলবশত দুর্গাপুজোয় যোগ দেন, যা উৎসবটিকে আন্তর্জাতিক বৈচিত্র্যের রঙে রাঙিয়ে তোলে।
প্রবাসের মাটিতে দুর্গাপুজো মানে শুধু ধর্মীয় অনুশ্ঠান নয়, বরং নস্টালজিয়া, ঐক্যবোধ এবং পরিচয় রক্ষার এক মহৎ উপলক্ষ। মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বাঙালিদের কাছে এই উৎসব তাঁদের শিকড়ের টানকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং বিদেশের মাটিতে থেকেও মাতৃভূমির আবহ এনে দেয়। ফলে বলা যায়, মালয়েশিয়ার দুর্গাপুজো প্রবাসী সমাজের কাছে ভক্তি, আনন্দ ও ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন।
ছবি: সংগৃহীত